অমরনাথ যাত্রা ২০২৫ : ৩ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে এই বছরের অমরনাথ যাত্রা। বৃহস্পতিবার সকালে শুরুর আগেই বাবা অমরনাথের প্রথম আরতি দিয়ে সূচনা হয় এই তীর্থযাত্রার। প্রতিবছরের মতো এবারও লক্ষাধিক ভক্ত জম্মু-কাশ্মীরের পাহাড়ি পথে যাত্রা শুরু করেছেন, ভরসা একটাই—ভগবান শিবের দর্শন লাভ।
অমরনাথ যাত্রা দুটি পথ ধরে হয়—অনন্তনাগ জেলার ৪৮ কিমি দীর্ঘ নুনওয়ান-পাহেলগাম রুট এবং গান্দেরবাল জেলার ১৪ কিমি দীর্ঘ খাড়া বালতাল রুট। পাহাড়, তুষার, বন ও উপত্যকা অতিক্রম করে বহু ভক্ত পায়ে হেঁটেই পৌঁছন এই গুহামন্দিরে। ভৌগোলিক অবস্থার কারণে বছরে মাত্র একবারই এই গুহা দর্শনের সুযোগ মেলে, কারণ বছরের বাকি সময় গুহা বরফে ঢাকা থাকে।
এই যাত্রা শেষ হবে রাখিবন্ধনের দিন, ৯ আগস্ট। গত বছর প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ এই যাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন, এবছরও একইরকম ভিড়ের আশা করছে প্রশাসন। গুহাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২,৭৫৬ ফুট উচ্চতায়, শ্রীনগর থেকে প্রায় ১৪১ কিমি দূরে অবস্থিত। হিমবাহ ও তুষারাবৃত পর্বতের কোলে এই গুহা শুধু প্রকৃতির এক বিস্ময় নয়, ভক্তদের কাছে এক পরম তীর্থক্ষেত্র।
জনশ্রুতি অনুসারে, এই গুহাতেই ভগবান শিব মা পার্বতীকে অমরত্বের গোপন কথা বলেছিলেন। গোপনে এই কথা বলার জন্য তিনি নন্দী, চন্দ্রমা ও অন্যান্য সঙ্গীদের পিছনে ফেলে একা এসেছিলেন। তবে গুহার ভিতরে মা পার্বতীকে গল্প শোনানোর সময় দুটি পায়রা সেই কথা শুনছিল। শিব যখন বুঝতে পারলেন, পায়রাদের ধ্বংস করতে উদ্যত হন। তখন পায়রারা বলেন, ‘‘আমাদের হত্যা করলে এই কাহিনি মিথ্যা হয়ে যাবে।’’ ভগবান শিব তাদের আশীর্বাদ দেন—তারা অমর থাকবে এবং এই স্থান ও কাহিনির সাক্ষ্য বহন করবে।
আজও সেই পবিত্র গুহায় সেই জোড়া পায়রার দেখা পাওয়া যায়, যা ভক্তদের কাছে অত্যন্ত শুভ লক্ষণ হিসেবে গণ্য হয়। কেউ কেউ বলেন, অমরনাথ যাত্রা পূর্ণ হয় তখনই, যখন সেই অমর পায়রা জোড়াকে দেখা যায়।
আধুনিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তার সহায়তায় এবার যাত্রাকে আরও সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ করে তোলা হয়েছে। প্রতিটি পথেই মোতায়েন রয়েছে সেনা ও চিকিৎসক দল, চালু হয়েছে হেলিকপ্টার পরিষেবাও।
এই যাত্রা কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি হাজার হাজার মানুষের বিশ্বাস, আত্মিক অন্বেষণ ও ঈশ্বরের প্রতি নিখাদ ভক্তির প্রতীক। বছরের এই কয়েকটি দিন যেন হয়ে ওঠে পরমের ছোঁয়া পাওয়ার এক বিরল সুযোগ।