নরেন্দ্র মোদীকে ঘানার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান | ভারত-ঘানা সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

Sourav Mondal
3 Min Read
নরেন্দ্র মোদীকে ঘানার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান

নরেন্দ্র মোদীকে ঘানার সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান : ঘানার বুকে ভারতীয় গর্বের নতুন ইতিহাস রচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পঞ্চদেশীয় আফ্রিকা সফরের সূচনায় ঘানায় পা রাখলেন তিনি, আর সেখানেই পেলেন দেশটির সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মান – ‘দ্য অফিসার অফ দ্য অর্ডার অফ দ্য স্টার অফ ঘানা’। রাষ্ট্রনায়কত্ব, আন্তর্জাতিক নেতৃত্বে প্রভাব এবং ভারত-ঘানা ঐতিহাসিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই সম্মান প্রদান করা হয় তাঁকে।

ঘানার রাজধানী আক্রায় এক গর্বময় অনুষ্ঠানে ঘানার প্রেসিডেন্ট জন ড্রামানি মাহামা নিজ হাতে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে এই সম্মান প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীও ভীষণভাবে আপ্লুত—তিনি বলেন, “ঘানার জাতীয় সম্মানে ভূষিত হওয়া এক গর্বের মুহূর্ত। আমি ১৪০ কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে এই সম্মান গ্রহণ করছি। এটি আমাদের যুবসমাজের আকাঙ্ক্ষা, আমাদের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং ভারত-ঘানার বন্ধুত্বের প্রতি উৎসর্গ করছি।”

এই সম্মান কেবল ব্যক্তি মোদীর নয়, বরং ভারত-ঘানার ঐতিহাসিক সম্পর্কের একটি দৃশ্যমান প্রতীক হয়ে উঠল। সফরের প্রতিটি পর্বেই যেন মিশে আছে দুই দেশের বন্ধুত্ব, কূটনীতি ও সহযোগিতার স্পষ্ট ছাপ।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায়, “ঘানা কেবল পশ্চিম আফ্রিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ নয়, এটি গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। এই সম্মান আমাকে দায়িত্ববোধে আরও দৃঢ় করল—ভারত-ঘানার বন্ধন আরও শক্তিশালী করে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমি।”

এই সফরে দুই দেশের মধ্যে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে। ঘোষিত হয়েছে ঘানার জন্য ITEC (Indian Technical and Economic Cooperation) ও ICCR (Indian Council for Cultural Relations) স্কলারশিপ দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত। ঘোষিত হয়েছে একটি দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র স্থাপন, যার মাধ্যমে ঘানার যুবসমাজ পাবে পেশাগত প্রশিক্ষণ।

কৃষি খাতে ঘানার ‘ফিড ঘানা’ প্রকল্পে ভারতের অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদী। একইসঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও ডিজিটাল অবকাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই আলোচনা দুই দেশের সম্পর্ককে উন্নীত করেছে ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’-এর স্তরে।

ঘানার সংসদে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যেখানে তিনি স্মরণ করিয়েছেন মহাত্মা গান্ধী ও কোয়ামে এনক্রুমার মতো নেতাদের। তিনি বলেছেন, “আমাদের ইতিহাসের ছায়াতেই গড়ে উঠেছে এই সম্পর্ক, যেটি এখন আরও গভীর বন্ধনে বাঁধা পড়ছে।”

এদিকে, ঘানার বিদেশমন্ত্রী স্যামুয়েল ওকুদজেতো আব্লাকওয়া স্পষ্ট ভাষায় জানান, “এই সম্মান ভারত ও ঘানার বন্ধুত্বের গভীরতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতীক। ভারত যেমন বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, তেমনি ঘানা আফ্রিকার এক শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারতের ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা, ৩ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং ২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রেক্ষাপটেই এই পুরস্কার মোদীজিকে প্রদান করা হয়েছে।

এই সফর নিঃসন্দেহে ভারত-ঘানার সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা এনে দিল। শুধু সম্মান নয়, এই সফর দু’দেশের ভবিষ্যতের রূপরেখা লিখে দিল সাহসের কলমে। ঘানার বুকে আজ ভারতীয় নেতৃত্বের গর্বিত প্রতিধ্বনি—এই বন্ধুত্ব বহুদূর যাবে, অনেকদূর যাবে।

Share this Article
Leave a comment