মনোজিৎ মিশ্র ধর্ষণ : গণধর্ষণের অভিযোগে রাজ্যজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র—তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা এবং অভিযুক্ত কলেজেরই অস্থায়ী কর্মী। ইতিমধ্যেই তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এবার কলেজ কর্তৃপক্ষও তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। বরখাস্ত করা হয়েছে তাকে অস্থায়ী কর্মীর পদ থেকে।
তবে শুধু গ্রেফতার বা বরখাস্ত নয়, তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই মনোজিতের পুরনো নানা কীর্তির খবর উঠে আসছে সামনে। কলেজ ক্যাম্পাসে তার দাপট, ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদের উপর দাদাগিরি, এমনকি শিক্ষিকাদের সঙ্গেও অসভ্য আচরণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অথচ, এতসব অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে কলেজে অস্থায়ী পদে নিযুক্ত ছিল সে, তা নিয়ে উঠছে তীব্র প্রশ্ন।
সূত্রের দাবি, গভর্নিং বডির সুপারিশেই নাকি এই চাকরি পেয়েছিল মনোজিৎ। এই নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল বলেই দাবি অনেকের। জানা গেছে, মনোজিৎ নিজে একজন প্রশিক্ষিত আইনজীবী। তবুও দিনে মাত্র ৫০০ টাকার চাকরি করে এতদিন কলেজে পড়ে ছিল সে। রাজনৈতিক যোগাযোগ ও কলেজে ‘পাওয়ার’ ধরে রাখার উদ্দেশ্যেই কি এই অবস্থান বজায় রেখেছিল সে?
অন্যদিকে, এই ঘটনায় অভিযুক্ত আরও দুই ছাত্র প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জাইব আহমেদকেও কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু এতেই কি দায় শেষ? দীর্ঘদিন ধরে যারা মনোজিতের ক্ষমতা দেখেও চোখ বুজে ছিলেন, তাঁদেরও কি জবাবদিহি করা উচিত নয়?
একাধিক শিক্ষক, ছাত্র ও প্রাক্তন কর্মীদের মতে, মনোজিৎ কলেজের ভেতরে আলাদা ‘রাজত্ব’ গড়ে তুলেছিল। যারা তার বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস দেখাত, তাদের ভয় দেখানো হতো। কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন—অভিযোগ জানা সত্ত্বেও কেন যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
এই ঘটনা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, কীভাবে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থেকে কিছু মানুষ ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন বছরের পর বছর। এখন শুধু প্রশ্ন—মনোজিতের গ্রেফতারির পর কি সত্যিই বদল আসবে? নাকি এই ঘটনা ক’দিন পরেই চাপা পড়ে যাবে আরেকটি খবরের গর্জনের নিচে?
শিক্ষিত সমাজ এখন এর সঠিক বিচার চায়। শুধু অভিযুক্তদের শাস্তি নয়, গোটা প্রশাসনিক কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়াকেও নিরপেক্ষ তদন্তের আওতায় আনার দাবি উঠছে নানা মহল থেকে। ক্যাম্পাসকে নিরাপদ রাখতে হলে এবার চোখ বুজে থাকা চলবে না।