মাজগাঁও ডক কলম্বো ডকইয়ার্ড অধিগ্রহণ : ভারতের নৌসামরিক কৌশলে বড়সড় পদক্ষেপ নিয়েছে পাবলিক সেক্টর প্রতিরক্ষা সংস্থা মাজগাঁও ডক শিপবিল্ডার্স। ২৭ জুন শেয়ার বাজারে জমা দেওয়া এক সরকারি ফাইলিংয়ে সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা শ্রীলঙ্কার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের প্রতিষ্ঠান কলম্বো ডকইয়ার্ড পিএলসি-র সিংহভাগ শেয়ার অধিগ্রহণ করতে চলেছে। প্রায় ৫২.৯৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের মাধ্যমে এই অধিগ্রহণ সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য শুধুমাত্র একটি বিনিয়োগ নয়—এটি ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মোকাবিলায় কৌশলগত এক চাল।
মাজগাঁও ডক জানায়, প্রাথমিক সাবস্ক্রিপশন এবং আনুষঙ্গিক শেয়ার অধিগ্রহণের মাধ্যমে তারা কলম্বো ডকইয়ার্ডের সিংহভাগ অংশীদার হবে। সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কলম্বো ডকইয়ার্ড একসময় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে রাজনৈতিক ও আর্থিক অস্থিরতার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের এই পদক্ষেপ শ্রীলঙ্কার প্রতি আস্থা জাহিরের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে ভারতের সক্রিয় উপস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এর আগে ভারতীয় সংস্থা আদানি পোর্টস কলম্বো বন্দরের পশ্চিম কন্টেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ করে এবং গভীর জলের কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করে। ভারতের এই একের পর এক পদক্ষেপ স্পষ্ট করে দিচ্ছে—শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক গুরুত্বকে কেন্দ্র করে দিল্লি কৌশলগতভাবে এগোচ্ছে। চীন ইতিমধ্যেই হাম্বানটোটা বন্দর ও বিশাল তেল শোধনাগার প্রকল্পে বিনিয়োগ করে শ্রীলঙ্কায় তাদের অবস্থান দৃঢ় করেছে। তাই ভারতের এই নতুন বিনিয়োগ প্রতিযোগিতার বার্তা স্পষ্টভাবে দিচ্ছে।
চলতি বছরের এপ্রিলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে ত্রিঙ্কোমালিতে একটি শক্তিকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য চুক্তি করেন। এটি ছিল ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সম্পর্ক জোরদারের আরেকটি ধাপ। চীন মাঝেমধ্যে তাদের ‘গুপ্তচর জাহাজ’ শ্রীলঙ্কার বন্দরে আনার চেষ্টা করে, যা নিয়ে দিল্লির উদ্বেগ দীর্ঘদিনের। এমন প্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কার বন্দরে ভারতের সরাসরি উপস্থিতি ভবিষ্যতে চীনের তৎপরতার উপর নজরদারিতে সহায়ক হবে।
এই চুক্তি এবং বিনিয়োগ ভারতের “নেবারহুড ফার্স্ট” নীতির বাস্তবায়নের অন্যতম দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পালাবদলে এই পদক্ষেপ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, সে বিষয়ে কূটনৈতিক মহলে একরকম সর্বসম্মতি রয়েছে। কলম্বো ও ত্রিঙ্কোমালিতে ভারতের সক্রিয়তা শুধু ব্যবসায়িক নয়, বরং এক গভীর কৌশলগত বার্তা।