কসবা ল কলেজ গণধর্ষণ : কলকাতার কসবা এলাকার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ভেতরে এক আইনের ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষিত ও খুন হওয়া তরুণীর বাবা। তাঁর চোখেমুখে যন্ত্রণার ছায়া, গলায় ক্ষোভ মিশ্রিত হতাশা— “আমার মেয়ের মৃত্যুর পরও তো মানুষ রাস্তায় নেমেছিল, প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু তাতেও কিছু বদলায়নি। আবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। আর কতবার এমন দেখতে হবে?”
এই ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই ল কলেজের সঙ্গে যুক্ত এবং তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলেই জানা যাচ্ছে। মনোজিৎ মিশ্র কলেজের একজন অস্থায়ী কর্মী ও প্রাক্তন ছাত্র। জেব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায় কলেজের বর্তমান পড়ুয়া। নির্যাতিতার বাবার অভিযোগ, “কলেজের মধ্যেই যদি ছাত্রীরা সুরক্ষিত না থাকে, তাহলে আর কোথায় নিরাপত্তা পাবে? এদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে যদি ছাড় দেওয়া হয়, তাহলে আরও অনেকে সাহস পাবে এমন কাজ করতে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার মুখে বলছে ‘কন্যাশ্রী’, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’, কিন্তু বাস্তবে কী ঘটছে সেটা তো এই ঘটনাগুলোই বলছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন চুপ করে আছেন? তাঁর দলের ছত্রছায়ায় এভাবে অপরাধ চললে রাজ্যের মেয়েদের কী ভবিষ্যৎ?”
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে কলেজের ভিতরেই ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়। শুক্রবার নির্যাতিতা থানায় অভিযোগ দায়ের করলে দ্রুত তদন্তে নামে পুলিশ। তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছ থেকে মনোজিৎ ও জেব-কে গ্রেফতার করা হয়, রাতেই প্রমিতকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তাদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে অভিযুক্তদের আদালতে তোলা হয়েছে।
এই ঘটনা সমাজে ফের একবার প্রশ্ন তুলছে— এই শহরে ছাত্রীরা কতটা নিরাপদ? এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমাদের কতটা অসাড় করে তুলেছে? আমরা কি শুধুই শোক প্রকাশ করেই থেমে যাব?
আরজি কর নির্যাতিতার বাবার কথাই যেন আমাদের কানে বাজছে বারবার— “আমার মেয়ের মৃত্যুর পরও যদি কিছু না শেখে এই সমাজ, তবে আর কবে?”