খামেনির উত্তরসূরি কে হবেন : মধ্যপ্রাচ্যে আবার উত্তপ্ত হাওয়া। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর মতে, খামেনির মৃত্যুই হয়তো ইরান-ইজরায়েল দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাটজও খামেনির পরিণতিকে সাদ্দাম হোসেনের মতো বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও জি-৭ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে এসে স্পষ্ট বলেন, আমেরিকা খামেনির অবস্থান জানে এবং চাইলে তাকে সরিয়ে দিতে পারে, তবে আপাতত সেই সিদ্ধান্ত থেকে বিরত রয়েছে। এই ঘন ঘন হুমকির পর ইরানও চুপ করে বসে নেই। খামেনি নিজেই বুধবার জানিয়ে দেন, ইহুদিবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে তারা কোনো দয়া দেখাবে না, বরং কঠোর জবাব দেবে।
এই রাজনৈতিক নাটকীয়তার মধ্যে জেগে উঠেছে এক বড় প্রশ্ন— যদি খামেনির জমানার অবসান ঘটে, তাহলে কে হবেন পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা? ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কাঠামো এমন, যেখানে উত্তরাধিকার নির্ধারণ অনেকটা ছায়ার আড়ালে ঘটে, কিন্তু তবুও সম্ভাব্য নাম কয়েকটি আলোচনায় উঠে এসেছে।
সবচেয়ে আলোচিত নাম মোজতাবা খামেনি। আয়াতুল্লাহ খামেনির দ্বিতীয় পুত্র তিনি, এবং আইআরজিসি তথা ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র বেশ পুরনো। বর্তমানে তিনি দেশের প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করছেন এক অদৃশ্য শক্তি হিসেবে। যদিও তিনি এখনও উচ্চমার্গের আলেম নন, তবুও রাজনৈতিক ক্ষমতা ও পরিবারগত উত্তরাধিকারের সূত্রে তাঁকেই অনেকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে দেখছেন।
আরও এক সম্ভাব্য নাম আলিরেজা আরাফি। তিনি একজন উচ্চপদস্থ আলেম এবং বিশেষজ্ঞ পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান, পাশাপাশি গার্ডিয়ান কাউন্সিলের সদস্য। ইরানের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দুই ময়দানেই তাঁর অভিজ্ঞতা গভীর।
তালিকায় রয়েছেন আলি আসগর হেজাজি, যিনি খামেনির কার্যালয়ে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ে নীতিনির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাঁর গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংযোগ এবং কৌশলগত সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ তাঁকে শক্তিশালী করে তুলেছে।
মহম্মদ গোলপেয়গানি, যিনি দীর্ঘদিন ধরে খামেনির চিফ অব স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন, তিনিও একজন সম্ভাব্য মুখ। প্রশাসনিক দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার জন্য তিনি পরিচিত হলেও তাঁর ধর্মীয় পরিচিতি তুলনামূলক কম।
তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইরানের ‘বিশেষজ্ঞ পরিষদ’—৮৮ জন সিনিয়র আলেমের একটি সংস্থা, যাঁরা গোপনে আলোচনা করে নির্ধারণ করেন কে হবেন দেশের সর্বোচ্চ নেতা। এমনকি প্রয়োজনে একজনের বদলে তাঁরা একটি ‘নেতৃত্ব পরিষদ’-ও গঠন করতে পারেন।
বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে এই প্রশ্নটা আর শুধুই অনুমান নয়—এটা বাস্তব রাজনৈতিক জরুরি প্রশ্নে পরিণত হয়েছে। খামেনির পতনের পর ইরান কোন পথে হাঁটবে, সেটা শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—ইতিহাসের পাতায় পরবর্তী অধ্যায় লেখার।