কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের আগে টেন্ডার বিতর্কে উত্তাল রাজনীতি : কালীগঞ্জে উপনির্বাচনের একদিন আগে হঠাৎ করেই রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়াল। বিষয়টা টেন্ডার বিতর্ক ঘিরে। ভোট নিয়ে যখন চারপাশে চরম উত্তেজনা, তখন এমন একটা অভিযোগ তুলে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম যেন নতুন প্রশ্নের জন্ম দিলেন।
ফিরহাদ হাকিম বিধানসভায় দাঁড়িয়ে স্পষ্ট ভাষায় অভিযোগ করেছেন— উপনির্বাচনের বিভিন্ন প্রস্তুতি ও প্রযুক্তিগত কাজে যেটুকু লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার, তার টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। তাতে রাজ্যের বেশ কিছু অভিজ্ঞ সংস্থা অংশ নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরাতটা চলে গেল গুজরাতের একটি সংস্থার হাতে।
মন্ত্রী রীতিমতো হতাশ গলায় বলেন, “আমাদের রাজ্যের সংস্থাগুলোর কি কোনও যোগ্যতা নেই? তারা টেন্ডার জমা দিল, সব শর্ত পূরণ করল, তাও তাদের বাদ দিয়ে বাইরের একটা সংস্থাকে বেছে নেওয়া হল কেন? কমিশন কি বাংলার সংস্থাগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছে না?”
এই কথা শুনে অনেকেরই মনেই প্রশ্ন জেগেছে— ভোটের সময় যখন গোটা প্রশাসন ভোট কমিশনের হাতে, তখন কি সত্যিই এত বড় একটা সিদ্ধান্তে রাজ্যকে পাশে রাখা হল না? এটা কি কেবল একবারের ঘটনা, না এর পেছনে রয়েছে আরও কিছু?
এই পরিস্থিতিতে ‘বঞ্চনা’র অভিযোগ নতুন কিছু নয়। কিন্তু ভোটের ঠিক আগের মুহূর্তে এমন একটা ইস্যু সামনে চলে এলে তা যে জনমানসে প্রভাব ফেলবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিকে কালীগঞ্জে ভোট নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। উপনির্বাচন হচ্ছে কারণ কিছুদিন আগেই প্রয়াত হন তৃণমূলের বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ। তাঁর মেয়ে আলিফা আহমেদ এবার বাবার আসন ধরে রাখতে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন।
আলিফার প্রচারে ছিল ব্যক্তিগত আবেগ, বাবাকে হারানোর যন্ত্রণা আর মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার এক মেলবন্ধন। ভোটারদের সঙ্গে দেখা, কথা বলা, ঘরে ঘরে গিয়ে আবেদন— সবটাই যেন নিজের মানুষদের সঙ্গে এক আত্মিক সংযোগের মতো। শেষদিন তাঁর সমর্থনে প্রচারে এসেছিলেন তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। দল আত্মবিশ্বাসী— আসনটি ধরে রাখবে, বরং ভোটের ব্যবধান বাড়ানোই এখন তাদের লক্ষ্য।
অন্যদিকে, বিজেপি পক্ষেও পিছিয়ে থাকেননি শীর্ষ নেতারা। শেষ দিনের প্রচারে হাজির হন শুভেন্দু অধিকারী ও সুকান্ত মজুমদার। তাদের বার্তা ছিল স্পষ্ট— পরিবর্তনের সময় এসেছে, রাজ্যে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে’ ভোট দিন।
সব মিলিয়ে কালীগঞ্জের ভোট যে শুধুই একটি আসন নিয়ে লড়াই নয়, তা পরিষ্কার। এটা একদিকে আবেগের লড়াই, অন্যদিকে প্রশাসনিক স্বচ্ছতার প্রশ্ন। আর টেন্ডার বিতর্ক সেই আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলল।
ভোটাররা আগামীকাল ভোট দেবেন। কিন্তু ভোটের বাক্সে শুধু প্রার্থী নয়, জমা পড়বে আস্থা, বঞ্চনা, স্বচ্ছতা আর পরিবর্তনের যাবতীয় প্রশ্নও। উত্তরের অপেক্ষায় এখন শুধু আরও একদিন।