ইরান ইজরায়েল সংঘাত 2025 : মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা যেন রোজ বেড়েই চলেছে। ইরান-ইজরায়েলের মধ্যে চলতে থাকা বিবাদ এখন আর শুধু আঞ্চলিক সীমায় আবদ্ধ নেই—আন্তর্জাতিক মহলও এতে জড়িয়ে পড়েছে। উত্তেজনার পারদ চড়তেই ইরানের পাশে এবার সোজাসুজি এসে দাঁড়াল উত্তর কোরিয়া। কিম জং উনের দেশের বিদেশমন্ত্রী কড়া ভাষায় ইজরায়েলকে কাঠগড়ায় তুলে বলেছেন, “ইজরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে এবং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।” এই মন্তব্য বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
একইসঙ্গে, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজরায়েল কাৎস সরাসরি আক্রমণ শানিয়ে দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামেনিকে। তাঁকে আখ্যা দেওয়া হয়েছে ‘আধুনিক হিটলার’ হিসেবে। কাৎসের কড়া হুঁশিয়ারি, “এই ব্যক্তিকে আর থাকতে দেওয়া যায় না। আমাদের সেনাবাহিনী (IDF) জানে কীভাবে টার্গেট করতে হয়। নির্দেশ দেওয়া আছে।” এমন মন্তব্য নিছক রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং একরকম যুদ্ধ ঘোষণার মতো বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
পাল্টা চুপ থাকেননি খামেনিও। আমেরিকান মদতে চলা ইহুদিবাদী সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, “এভাবে কথা বলাটা তাদের দুর্বলতা এবং অক্ষমতারই পরিচায়ক।” তাঁর এই বক্তব্যে পরোক্ষে আমেরিকাকেও নিশানা করেছেন তিনি। ট্রাম্প আমলে ইরান-আমেরিকা সম্পর্ক যে তলানিতে ঠেকেছিল, তা আজও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে এই উত্তপ্ত পরিবেশে।
এই আবহেই ইরানের বিদেশমন্ত্রী আব্বাস আরাকাচি যাচ্ছেন ইউরোপে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে জেনেভায় বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তাঁর। আলোচনার মূল বিষয় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ। প্রশ্ন উঠছে—ইরান কি চাপে পড়ে কূটনৈতিক টেবিলে বসতে বাধ্য হচ্ছে? নাকি এটা তাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনারই অংশ? ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও এই বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনা থাকছে।
অন্যদিকে, আমেরিকা এখনো সরাসরি যুদ্ধের বার্তা না দিলেও, ইজরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে রেখেছে। এতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের সময় ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, এবার ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে ওয়াশিংটনের ভূমিকা অনেকটাই অস্পষ্ট। এই কৌশলগত নীরবতা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে।
সব মিলিয়ে, এই মুহূর্তে ইরান-ইজরায়েল সংঘাত শুধুই কথার লড়াই নয়। উত্তেজনার আঁচ পৌঁছে যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়া জুড়ে। উত্তর কোরিয়ার সরব হওয়া পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দেখার, আলোচনার টেবিলেই কি সমাধান খোঁজা যাবে, নাকি আরও বড় সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে দুনিয়া।