ভারত ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ ২০২৫ : অহমদাবাদ-লন্ডন বিমান দুর্ঘটনার ছায়া ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের ওপর যেন ঘনিয়ে এসেছে এক বিষাদের মেঘ। ১৩ জুনের সেই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর গোটা দেশ এখনও শোকগ্রস্ত। মৃত্যুর সংখ্যাটা কেবল পরিসংখ্যান নয়, প্রতিটি সংখ্যার পেছনে লুকিয়ে আছে একেকটা পরিবারের কান্না, অপূর্ণ স্বপ্ন আর হাহাকার। এই পরিস্থিতিতে দেশের মানসিক ক্ষত সারাতে মাঠে নামছে টিম ইন্ডিয়া। শুধু একটা টেস্ট সিরিজ জেতা নয়, শুভমন গিল, ঋষভ পন্থদের মিশন এবার দেশের জন্য, সেই মানুষগুলোর জন্য যাদের জীবনে সম্প্রতি নেমে এসেছে গভীর অন্ধকার।
বুধবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে টিম ইন্ডিয়ার সহ-অধিনায়ক ঋষভ পন্থ বলেন, “বিমান দুর্ঘটনায় গোটা দেশ শোকাহত। আমাদের দলের পক্ষ থেকে সকলের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা জানি, এমন মুহূর্তে খুব একটা কিছু করার থাকে না, কিন্তু আমরা চাই মাঠে আমাদের পারফরম্যান্স দিয়ে মানুষের মুখে একটু হাসি ফোটাতে। আমরা দেশের জন্য নিজেদের সেরাটা দিতে চাই।”
২০ জুন থেকে লিডসে শুরু হচ্ছে ভারত-ইংল্যান্ড পাঁচ ম্যাচের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ। তবে এবার আর এটি শুধুমাত্র একটি সিরিজ নয়, এই সিরিজে রয়েছে আবেগের ছোঁয়া। দেশের বুকে এতবড় এক বিপর্যয়ের ঠিক পরে ভারতীয় ক্রিকেট দল চায় যেন ২২ গজে লড়াই করে দেশবাসীকে কিছুটা শান্তি দিতে। কারণ খেলাধুলার শক্তি ঠিক এখানেই আঘাতের উপর প্রলেপ দেওয়া, হারানোর বেদনার মাঝে কিছুটা আনন্দ খুঁজে পাওয়া।
উল্লেখ্য, এই সিরিজের নামকরণ করা হয়েছে ‘তেন্ডুলকর-অ্যান্ডারসন ট্রফি’, যা ১৪ জুন উন্মোচিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণে এই অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ECB) সেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। সিরিজ শুরুর এক দিন আগে, বৃহস্পতিবার ট্রফি উন্মোচন হবে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে, যেখানে দুই দেশের ক্রিকেটাররাও থাকবেন। এই সিরিজের প্রতিটি মুহূর্ত তাই অনেক বেশি অর্থবহ হয়ে উঠবে, কারণ সেখানে থাকবে হারানোর শোক, সম্মান জানানোর চেষ্টা এবং খেলার মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক নীরব অঙ্গীকার।
অহমদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন ২৭৫ জন। তাঁদের স্মৃতিতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালেও শোকজ্ঞাপন করেন অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। কালো আর্ম ব্যান্ড পরে নামেন প্যাট কামিন্স ও টেম্বা বাভুমারা। ভারতীয় দলও একইভাবে প্রস্তুতি ম্যাচের শুরুতে নীরবতা পালন করে ও শোকস্তব্ধ আবহে শ্রদ্ধা জানায় নিহতদের।
এই মুহূর্তে ক্রিকেট শুধু আর খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এবার এটা এক দায়, এক অঙ্গীকার জানিয়ে দেওয়া যে মাঠের বাইরের যন্ত্রণা আমরা বুঝি, আমরা শেয়ার করি, এবং যতটা পারি, সেই ব্যথা ভাগ করে নিতে চাই। শুভমন গিলের নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়া সেই উদ্দেশ্য নিয়েই নামছে হেডিংলির মাঠে নয় শুধু জয়ের জন্য, বরং দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও।