ঢাকায় দুর্গা মন্দির ভাঙচুর : ঢাকার খিলক্ষেতে একটি দুর্গা মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এই ঘটনা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতার প্রতিফলন, যারা নিজেদের দেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না।
ঘটনার সূত্রপাত খিলক্ষেত এলাকার একটি পুরনো দুর্গা মন্দিরকে ঘিরে, যা সম্প্রতি চরমপন্থীদের নজরে পড়ে। মন্দিরটিকে ‘অবৈধ জমি দখল’ হিসেবে চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষ মন্দির ধ্বংসের অনুমতি দেয়। অভিযোগ, মন্দির কর্তৃপক্ষকে প্রতিমা স্থানান্তরের পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে হঠাৎ করেই ভাঙচুর চালানো হয়, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রতিমাও। এই ঘটনায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
ভারত বলেছে, এই ধরনের ঘটনা শুধু ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নয়, বরং রাষ্ট্রের পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব ও চরমপন্থীদের প্রতি নরম মনোভাবকেই প্রকাশ করে। ভারতের দৃষ্টিতে এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে, বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুরা ক্রমাগত অবহেলিত ও নির্যাতিত হচ্ছে এবং প্রশাসন তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ।
গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সময় থেকেই ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে একটা শীতলতা স্পষ্ট হচ্ছিল। এখন এই মন্দির ভাঙার ঘটনা সেই সম্পর্কের আরও অবনতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়। এর আগেও কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটে ভাঙচুরের ঘটনায় ভারত প্রতিবাদ জানিয়েছিল। একইসঙ্গে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের একের পর এক ঘটনার জন্য ইউনুস সরকারকে দায়ী করে চলেছে নয়াদিল্লি।
ভারত আরও অভিযোগ করেছে, ইউনুস সরকারের শাসনকালে একদিকে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, আবার অন্যদিকে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মতো একজন নিরপরাধ হিন্দু সন্ন্যাসীকে মিথ্যা মামলায় আটক রাখা হয়েছে। এমন বৈষম্যমূলক আচরণে প্রশ্ন উঠছে বাংলাদেশ সরকারের নৈতিক অবস্থান ও ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বরাবরই ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে তা শুধু কূটনৈতিক স্তরেই নয়, দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—সরকারি সদিচ্ছা দেখিয়ে হিন্দু সংখ্যালঘু ও তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। তা না হলে আন্তর্জাতিক মহলেও দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।