এস জয়শঙ্কর চিন এসসিও সন্ত্রাসবাদ : চিনে আয়োজিত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)-এর বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের তরফে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে উপস্থিত হলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চিনের মাটিতেই তিনি স্পষ্ট বার্তা দিলেন সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে। বললেন, এই তিন ‘অশুভ শক্তি’র বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই চালানো দরকার, এবং এসসিওর সব সদস্য দেশকেই তাতে একজোট হতে হবে।
বৈঠকের শুরুতেই জয়শঙ্কর মনে করিয়ে দেন এসসিও গঠনের মূল উদ্দেশ্য— তিনটি চ্যালেঞ্জ, অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ২২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, এই হামলা শুধুমাত্র নিরীহ মানুষকে লক্ষ্য করেই হয়নি, বরং জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন নির্ভর অর্থনীতিকে দুর্বল করার এবং ধর্মীয় বিভাজনের উদ্দেশ্যও ছিল এর পেছনে।
তিনি উল্লেখ করেন, এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যে বিবৃতি দিয়েছে, তাতে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। জয়শঙ্করের স্পষ্ট বার্তা— ভারত সেই দিশায় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এই লড়াই জারি থাকবে।
চিনের মাটিতে দাঁড়িয়ে জয়শঙ্করের এই বার্তা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সম্প্রতি ভারতীয় গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, লস্কর-ই-তৈবার ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফোর্স’-এর হাতেই সংঘটিত হয়েছিল পহেলগাঁও হামলা। আর সেই সংগঠনের পেছনে ছিল পাকিস্তানের সক্রিয় মদত।
অন্যদিকে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক অপারেশন ‘সিঁদুর’-এর সময় চিনের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে পরোক্ষ সাহায্যের অভিযোগে দিল্লি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আর তার ঠিক পরেই এসসিও বৈঠকে জয়শঙ্করের কণ্ঠে যে বার্তা উঠে এল, তাতে কোনও রাখঢাক ছিল না।
এসসিও-র সদস্য দেশগুলির উদ্দেশে জয়শঙ্কর বলেন, সংগঠনের প্রতিষ্ঠালগ্নের উদ্দেশ্যকে সফল করতে হলে সন্ত্রাস, বিচ্ছিন্নতাবাদ ও উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব নিতে হবে। এই তিনটি শক্তি প্রায়শই একসঙ্গে কাজ করে, এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পক্ষে তা বিপজ্জনক।
এই বক্তব্য শুধু ভারতের অবস্থান নয়, বরং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রশ্নেও তাৎপর্যপূর্ণ। কূটনৈতিক মহলের মতে, চিনের মঞ্চ থেকে উঠে আসা এই বার্তা আন্তর্জাতিক মহলে পাকিস্তানের প্রতি চাপ বাড়াবে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কণ্ঠস্বরকে আরও জোরালো করে তুলবে।
ভারতের পক্ষ থেকে এই স্পষ্ট বার্তা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশটির দৃঢ়তা ও দায়বদ্ধতার পরিচয় বহন করে। সময়ই বলবে, বাকি সদস্য দেশগুলি এই প্রশ্নে কতটা কার্যকরভাবে ভারতের পাশে দাঁড়ায়। তবে এটুকু নিশ্চিত, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই এখন আর একার নয়— তা বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।