ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি : ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউজে সরকারি ব্যয় বিল প্রচারের এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তাঁর দেশ চিনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। একইসঙ্গে ভারত সম্পর্কেও দিলেন বড়সড় ইঙ্গিত। তাঁর কথায়, “আমাদের সামনে আরও একটি চুক্তি আসছে, সম্ভবত ভারতের সঙ্গে। এটি খুব বড় হতে চলেছে।” ট্রাম্প বলেন, “আমরা ভারতকে উন্মুক্ত করতে যাচ্ছি। চিনের সঙ্গেও তাই করেছি। এটা এমন এক পদক্ষেপ যা আগে কখনও ঘটেনি।”
চিনের সঙ্গে ঠিক কী নিয়ে চুক্তি হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে না জানালেও ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন, হোয়াইট হাউজ এখন সবাইকে নিয়ে চুক্তি করবে না। তিনি বলেন, “আমরা সবার সঙ্গে চুক্তি করব না। তবে আমরা দারুণ কিছু চুক্তি করছি। আমরা সবাইকে চিঠি দিয়ে জানাব কে কতো শতাংশ শুল্ক দেবে—২৫, ৩৫ বা ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। যদিও আমার দল চায়, আমি যতোটা ভাবছি তার থেকেও বেশি চুক্তি হোক।”
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যের পর নতুন করে আলোচনায় ফিরে এল ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি। কারণ, গত কয়েক মাস ধরেই দুই দেশের মধ্যে এই বিষয়ে কথাবার্তা চলছে। ৪ জুন দিল্লিতে এসেছিল মার্কিন প্রতিনিধিদল। নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডন লিঞ্চ। এই বৈঠক আগে দুই দিনের কথা থাকলেও তা গড়ায় ১০ জুন পর্যন্ত। আলোচনায় উঠে এসেছে শুল্ক সংক্রান্ত নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, বিশেষ করে ১০% বেসলাইন আমদানি শুল্ক নিয়ে দ্বন্দ্ব।
২০১৯ সালের পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক শুল্ক সিদ্ধান্তে প্রভাব পড়েছে ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য সম্পর্কে। ২ এপ্রিল আমেরিকা এই শুল্ক আরোপের পর ভারত বারবার বলেছে, এই শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ, এটি বৈষম্যমূলক এবং ভারতের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সূত্রের খবর, ভারত ব্রিটিশ মডেলের মতো ‘আংশিক সুবিধা’র পক্ষে নয়—যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও শুল্ক অব্যাহত রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের মন্তব্যকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে কূটনৈতিক মহল। কারণ, চলতি মাসেই ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরামে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লাটনিক বলেছিলেন, খুব শিগগিরই একটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে। এমনকি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলও জানিয়েছেন, দুই দেশ একটি ন্যায্য ও পরস্পর-উপকারি চুক্তির দিকেই এগোচ্ছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘মিশন-৫০০’ নাম দিয়ে একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছিলেন, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছনো। তবে সেই সফরেই ট্রাম্প আবার ভারতকে ‘বিশ্বে সর্বাধিক শুল্ক আরোপকারী দেশ’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে—আসলে কতটা সম্ভব একটি ‘খুব বড়’ চুক্তি? ভারতের দাবি অনুযায়ী শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার হবে কি না? আর আমেরিকা তার পুরোনো অবস্থান থেকে সরবে কিনা? সবকিছুর উত্তর সময়ই দেবে। তবে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে দু’দেশের মধ্যে বড়সড় কিছু ঘোষণার আর খুব বেশি দেরি নেই বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।