বাঁকুড়ায় টানা বৃষ্টি : বর্ষা শুরু হতেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় টানা বৃষ্টির জেরে নদ-নদীগুলি রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। তার সবচেয়ে ভয়াবহ চেহারা দেখা যাচ্ছে বাঁকুড়ায়। মাত্র দু’দিনেই ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে জেলায়। যার জেরে ফুলেফেঁপে উঠেছে শিলাবতী ও গন্ধেশ্বরী নদী। নদীর জলস্তর এতটাই বেড়েছে যে একের পর এক সেতু ডুবে যাচ্ছে জলে। ফলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যান চলাচল, আর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু গ্রামের সঙ্গে শহরের যোগাযোগ।
সিমলাপাল সেতু থেকে শুরু করে ভেলাইডিহা ও মানকানালি সেতু— কোথাও তিন ফুট, কোথাও চার ফুট জল বইছে সেতুর উপর দিয়ে। বৃহস্পতিবার ভোরে সিমলাপালের পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে একটি ট্রাক, সেতুর মাঝপথে আটকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারাই ঝুঁকি নিয়ে চালক ও সহযাত্রীদের উদ্ধার করেন।
মানকানালি অঞ্চলের বাসিন্দাদের অবস্থা আরও করুণ। মূল সেতু ডুবে যাওয়ায় ঘুরপথে বাঁকুড়া শহরে পৌঁছতে হচ্ছে প্রায় ৩০ কিমি ঘুরে। অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সেতুর উপর দিয়ে চলাফেরা করছেন। এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, “জল নামার কোনও গতি নেই, কিন্তু অফিস বা হাসপাতালে যেতে হলে এই ভাসা সেতু পার করতেই হবে। জীবনের তো দাম নেই আমাদের মতো গরিব মানুষের।”
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, মৌসুমী অক্ষরেখা সক্রিয় থাকায় এবং বঙ্গোপসাগরের উপর নিম্নচাপ তৈরি হওয়ায় আগামী কয়েকদিন দক্ষিণবঙ্গে আরও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাঁকুড়া প্রশাসন সতর্কতা জারি করলেও গ্রামে কার্যকরভাবে সেই নির্দেশ পৌঁছচ্ছে না। মানুষের অভাব, বিকল্প রাস্তার ঘাটতি এবং সচেতনতার অভাবের ফলে বিপজ্জনক জলমগ্ন সেতু দিয়েই চলছে চলাফেরা।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, প্রতি বছরই তো বর্ষা আসে, তা হলে এই দুর্যোগের প্রস্তুতি কেন নেই? বারবার কেন এমন ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা? গ্রামের সাধারণ মানুষ কেন এখনও নিজেদের প্রাণ হাতে নিয়ে নদী পেরোয়? সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি, কারণ শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, অদূরদর্শিতাও আজ বাঁকুড়ার বড় বিপদ।