১০০ দিনের কাজ ফের চালু পশ্চিমবঙ্গে : কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন করে প্রাণ পেল পশ্চিমবঙ্গের ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। বহু মাস ধরে বন্ধ থাকা এই প্রকল্প নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে যে টানাপড়েন চলছিল, তা কিছুটা হলেও প্রশমিত হতে চলেছে আদালতের হস্তক্ষেপে। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞনম ও বিচারপতি হিরণময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, প্রয়োজন অনুযায়ী শর্ত আরোপ করে হলেও, আগামী ১ অগাস্ট থেকে কেন্দ্রকে এই প্রকল্প ফের চালু করতে হবে রাজ্যে।
দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় অর্থ বন্ধ থাকায় প্রকল্প থমকে ছিল। কেন্দ্রের অভিযোগ ছিল, এই প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। তবে আদালতের বক্তব্য—যেহেতু দুর্নীতির তদন্ত হয়েছে এবং সেই তদন্তে যে অর্থ উদ্ধার হয়েছে তা একটি পৃথক তহবিলে রাখা আছে, তাই এখন প্রকল্প বন্ধ রাখার কোনও যৌক্তিকতা নেই। মানুষের জীবন-জীবিকা কোনও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি হতে পারে না।
আদালত আরও বলেছে, দুর্নীতি রোধে কেন্দ্র নিজের মতো করে শর্ত আরোপ করতে পারবে। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা বিশেষ শর্তও ঠিক করতে পারে। জব কার্ডধারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ পাঠানোরও অনুমতি দিয়েছে আদালত। একইসঙ্গে নজরদারির জন্য কেন্দ্রের তরফে যেকোনও ব্যবস্থা গ্রহণের পথও খুলে দিয়েছে এই রায়।
এই রায়ের পরে রাজনীতির মাঠেও নড়ে চড়ে বসেছে রাজনৈতিক দলগুলো। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এটা প্রমাণ করে কেন্দ্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে কাজ থেকে বঞ্চিত করেছে। তাদের বক্তব্য, এটা একপ্রকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া কিছু নয়। কেন্দ্র রাজ্যের জনগণের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়েছিল।
অন্যদিকে বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য বলেন, এই রায় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। তাঁর আশঙ্কা, যারা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে এই রাজ্যে কাজ করতে আসবেন, তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা কঠিন হবে। পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দেন, কেন্দ্রকে টাকা দিতে হলে হিসেব চাই। রাজ্য সরকার যদি তা না দেয়, তবে সেই অর্থ কোথা থেকে আসবে?
এই রায় ঘিরে আবারও নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে প্রশাসনিক মহলে। তবে রাজ্যের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের শ্রমজীবীরা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন। অনেকেই মনে করছেন, যদি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় এবং যথাযথ নজরদারি চালানো হয়, তাহলে উপকৃত হবেন তাঁরা। রাজনৈতিক চাপানউতোরের ফাঁকে যেন তাঁদের ন্যায্য অধিকার আবার ফিরে আসে—সেটাই এখন বড় চাওয়া।