বিরাট কোহলি টেস্ট ক্রিকেট : ১৪ বছরের দীর্ঘ ও গৌরবময় টেস্ট কেরিয়ারে হঠাৎ ইতি টানলেন বিরাট কোহলি। তাঁর এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে যেমন চমকে গিয়েছেন অনুরাগীরা, তেমনই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীও। তবে এই অবসরের পেছনের কারণ তিনি খানিকটা বুঝেছেন বলেও জানিয়েছেন। কোহলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে এক সপ্তাহ আগেই তাঁদের মধ্যে এ নিয়ে কথা হয়েছিল, জানালেন শাস্ত্রী।
গত ১২ মে সকালে একটি আবেগঘন ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বিরাট নিজেই জানান, আর টেস্ট ক্রিকেটে তাঁকে দেখা যাবে না। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক লেখেন, “এই দীর্ঘ যাত্রায় পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ। সময় হয়েছে সরে যাওয়ার।” এরপর থেকেই শুরু হয় জল্পনা—কেন এমন সিদ্ধান্ত? কী কারণে তিনি লাল বলের ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন এমন এক সময়ে, যখন ফিটনেস ও ফর্ম দুটোই তাঁর পক্ষে?
এই সব প্রশ্নের জবাব খোঁজার চেষ্টায় নামেন সাংবাদিকরা। এবং সেখানেই উঠে আসে রবি শাস্ত্রীর বক্তব্য।
এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “সিদ্ধান্তটা জানানোর ঠিক এক সপ্তাহ আগেই বিরাটের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। ওর কণ্ঠে কোনও দ্বিধা ছিল না। অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে ও জানিয়ে দেয়, মানসিকভাবে সে ক্লান্ত। শরীর চললেও মন আর সাড়া দিচ্ছে না। আমিও কিছুটা চমকে গিয়েছিলাম। আমার মতে ও আরও কয়েক বছর খেলতে পারত। কিন্তু মানসিকভাবে ফুরিয়ে গেলে আর কিছু করার থাকে না।”
শাস্ত্রী আরও বলেন, “কোহলি সব সময় মাঠে নিজের শতভাগ দেয়। তার মধ্যে একটা অতিরিক্ত দায়বদ্ধতা কাজ করে—মনে হয়, সব কিছু ওকেই করতে হবে। এই মানসিক চাপ খুব ধীরে ধীরে ক্ষয়ে দেয় একজন ক্রিকেটারকে। এমন অবসাদ এসে যায়, যেটা শরীর দিয়ে ঠেকানো যায় না। এটাই হয়েছে কোহলির ক্ষেত্রে।”
বিশ্বক্রিকেটে বিরাট কোহলির জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনুরাগীদের প্রত্যাশা—সবকিছু মিলিয়ে এক অদৃশ্য চাপ তাঁর উপর সবসময়ই কাজ করেছে। শাস্ত্রীর মতে, এই চাপই বড় কারণ।
তিনি বলেন, “গত দুই দশকে ওর মতো জনপ্রিয় ক্রিকেটার আসেনি। এমনকি সচিন টেন্ডুলকারের পর, মাঠ ও মাঠের বাইরে ভারতীয় ক্রিকেটের এত বড় আইকন আর কেউ হয়নি। নিজেকে ও যেভাবে উজাড় করে দিয়েছে, তাতে মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। হয়তো এখন ও বিরতি চাইছে, পরিবারকে সময় দিতে চাইছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, ওর প্রমাণ করার কিছুই বাকি নেই। বিরাট কোহলি ইতিমধ্যেই কিংবদন্তি।”
এই মুহূর্তে কোহলি আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলছেন। সেখানে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ছন্দে আছেন তিনি। তবুও টেস্ট থেকে অবসরের ঘোষণা, কোহলির ভেতরের যন্ত্রণা ও মানসিক ক্লান্তিরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন অনেকেই।
ক্রিকেটবিশ্ব এখনও কোহলির সিদ্ধান্ত হজম করতে পারেনি। তার পরও একটাই প্রশ্ন সবার মুখে—এই বিদায় কি চিরতরের? নাকি বিরতির পর আবার ফিরবেন তিনি, কোনও বিশেষ উপলক্ষে?
রবি শাস্ত্রীর কথায়, “কখনও বলো না, কখনও নয়। বিরাট যদি মনে করে সে আবার ফিরে আসবে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই ফিরতে পারে। কিন্তু আপাতত ওর দরকার বিশ্রাম, মানসিক পুনরুজ্জীবন। আমি ওকে চিনি—যদি ফেরার কথা ভাবে, তবে ফেরার পথ সে নিজেই তৈরি করবে।”
এই মুহূর্তে কোটি অনুরাগীর মনে একটাই প্রশ্ন—যেখানে বিরাট, সেখানেই ক্রিকেটের হৃদস্পন্দন। তবে সেই হৃদয়ে লাল বলের জায়গা কি চিরতরে ফাঁকা হয়ে গেল?
আরো পড়ুন..
রোহিত শর্মা স্ট্যান্ড উদ্বোধনে বাবা-মায়ের আবেগঘন উপস্থিতি
Animesh Mondal is a sports journalist and content creator with a deep passion for Indian cricket. Known for capturing emotional and powerful moments from the world of sports, He brings stories to life with a human touch. Through in-depth match reports and heartfelt narratives, Animesh aims to connect fans with the spirit of the game—one story at a time.