এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনা পায়েল খটিক : বাবার ঘামে ভেজা পরিশ্রমে তৈরি হয়েছিল মেয়ের স্বপ্নের মঞ্চ। রিকশা চালিয়ে যিনি মেয়ের প্রতিটি পাঠ্যবই, স্কুলের ফি, কোচিংয়ের খরচ সামলেছেন, সেই বাবার মুখে হাসি ফিরেছিল যেদিন মেয়ের লন্ডনে চাকরি হয়েছে খবর পেয়েছিলেন। পায়েল খটিক—গুজরাটের হিম্মতনগরের এক সাধারণ ঘরের অসাধারণ মেয়ে। যাঁর চোখে ছিল স্বপ্ন, আর পিঠে ছিল পরিশ্রমের ডানা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জীবনের প্রথম উড়ানে চেপেছিলেন। এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার (এআই-১৭১) বিমানে উঠে ছিলেন একরাশ উচ্ছ্বাস আর আশা নিয়ে। গন্তব্য লন্ডন। গন্তব্য নিজের গড়া ভবিষ্যৎ। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডেই সব ভেঙে পড়ে। বিমানটি উড়তে না উড়তেই মাটিতে আছড়ে পড়ে। বিস্ফোরণ, ধোঁয়া, চিৎকার, এবং তারপর নিস্তব্ধতা।
এই দুর্ঘটনায় বিমানের ২৪২ জন যাত্রী-চালক-কর্মী মিলিয়ে ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই তালিকায় পায়েলও। মৃত্যু হয়েছে আরও অন্তত ৩০ জনের, যাঁরা মাটিতে ছিলেন। একটি মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলের উপর ভেঙে পড়ে বিমানটি। মৃত্যু হয় ইন্টার্ন ডাক্তারদের, সাধারণ বাসিন্দাদের। একটি চায়ের দোকানে কাজ করা কিশোরও বেঁচে ফেরেনি।
অভিশপ্ত দিনের সেই ছবি আজও গেঁথে রয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখে। যাঁরা বলছেন, প্রথমে বিস্ফোরণের শব্দ, তারপর ধোঁয়া আর ছুটোছুটি। কেউ কাউকে চিনতে পারছে না। আহতদের উদ্ধার করতে গিয়ে বহুজন নিজের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলেছেন।
এখনও জানা যায়নি এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ। প্রাথমিকভাবে ‘পাখির ধাক্কা’ বলা হলেও, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি খতিয়ে দেখছে বিমানের ব্ল্যাকবক্স থেকে পাওয়া তথ্য। বিশেষ করে, শেষ ৩৩ সেকেন্ডে ঠিক কী হয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হচ্ছে।
তদন্ত যতই এগোক, মৃতদের পরিবার জানে, তাদের হারানো প্রিয়জন আর ফিরে আসবে না। পায়েলের বাবা জানেন, মেয়ের হাতে লন্ডনের প্রথম বেতনটা আর তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে না। যে মেয়ে বলেছিল, “বাবা, তুমিও একদিন প্লেনে চড়বে,” সেই মেয়েই আজ প্লেন দুর্ঘটনার বলি হয়ে ফিরে এল নিথর দেহে।
এই মর্মান্তিক ঘটনার পর গোটা দেশ শোকাহত। শুধু একটি মেয়ে নয়, হারিয়েছে বহু তরুণ প্রাণ, বহু পরিবারের ভরসা, বহু বাবার স্বপ্ন। এই দুর্ঘটনা যেন কেবল একটিমাত্র খবর নয়, যেন প্রতিটি নিঃশ্বাসে লুকিয়ে থাকা হাজারো আশার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার গল্প।
প্রশ্ন রয়ে যায়—এই দুর্ঘটনা কি এড়ানো যেত না? তদন্ত হয়তো উত্তর দেবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত, এই কান্না থামবে না। স্মৃতি হবে আর্তনাদের সাক্ষী। আর প্রতিটি বাবা-মায়ের মনে চলবে সেই একই প্রশ্ন—স্বপ্ন দেখা কি আজও নিরাপদ?