রান্নার গ্যাস পেতে বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক! নিয়ম জানেন তো? না হলে বন্ধ হতে পারে সিলিন্ডার ডেলিভারি

Sourav Mondal
2 Min Read
গ্যাস বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন

গ্যাস বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন : সকালের আলো ফোটার আগেই খোসবাগান এলাকার ডিলার অফিসের সামনে লম্বা লাইন। বুকিং কুপন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বহু মানুষ। রান্নার গ্যাস পাবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা। হঠাৎ করেই নিয়ম বদল। এখন থেকে গ্যাস পেতে হলে বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করতে হবে।

কিন্তু এই নিয়ম চালুর আগে কোনও রকম সরকারি নোটিস, প্রচার বা সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বুকিং করেও গ্যাস হাতে পাচ্ছেন না। একজন গৃহবধূ বললেন, “আমার স্বামী বাইরে থাকেন। উনিই অ্যাকাউন্ট হোল্ডার। এখন উনি না থাকায় বায়োমেট্রিক করানো যাচ্ছে না। একটা সিলিন্ডারই আছে। এটা শেষ হলে কীভাবে চলবে?”

এক প্রবীণ গ্রাহক ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, “আমরা তো অ্যাপ ঠিকমতো ব্যবহারই করতে পারি না। এখন বলা হচ্ছে, অ্যাপ বা অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক না করলে গ্যাস মিলবে না। আগে জানালে তো কিছু ব্যবস্থা করা যেত।”

ডিলাররাও ভীষণ চাপের মধ্যে। বহু মানুষ হঠাৎ ভিড় জমাচ্ছেন ডিলার অফিসে। বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া করতে গিয়ে কর্মীদেরও কাজের চাপ বেড়ে গিয়েছে। মোবাইল অ্যাপে বারবার সমস্যা দেখা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ভর্তুকি সংক্রান্ত দুর্নীতি রুখতেই এই নিয়ম আনা হয়েছে। তাঁর দাবি, অনেক সময় গ্যাস ব্যবহার না করেও অ্যাকাউন্টে ভর্তুকি ঢুকছে। বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে প্রকৃত গ্রাহকের তালিকা তৈরি করা সহজ হবে।

তবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম চালুর আগে কেন জানানো হল না? শহরের বিভিন্ন এলাকায় কোথাও কোনও বোর্ড বা মাইকিং হয়নি। যাঁদের বাড়িতে একটা মাত্র সিলিন্ডার, তাঁদের তো পরিস্থিতি আরও কঠিন। গ্যাস না পেলে রান্না বন্ধ, আর অন্য কোনও বিকল্পও নেই অনেকের।

এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন প্রবীণ নাগরিকরা এবং যাঁরা প্রযুক্তিভিত্তিক পরিষেবায় সড়গড় নন। অ্যাপের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন তাঁরা। অনেকেই বলছেন, নতুন নিয়ম হতে পারে, কিন্তু সেটাকে সময় দিয়ে, সঠিকভাবে প্রচার করে চালু করলে এই ভোগান্তি এড়ানো যেত।

রান্নার গ্যাস যেমন দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ, তেমনই সরকারি নীতিও জরুরি। কিন্তু দুইয়ের মাঝে সমন্বয় না থাকলে সমস্যার মুখে পড়ে সাধারণ মানুষই। নিয়মের কড়াকড়ি থাকুক, কিন্তু তার প্রয়োগ যেন মানবিক হয়—এই আর্জি এখন বর্ধমানের প্রতিটি গৃহস্থের মুখে মুখে।

Share this Article
Leave a comment