রাজ্য কর্মী ডিএ বকেয়া : ৬ সপ্তাহ সময় রাজ্যের হাতে, ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটানোর নির্দেশ স্পষ্ট করল সুপ্রিম কোর্ট

রাজ্য কর্মী ডিএ বকেয়া : রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ্যভাতা (ডিএ) সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিল, রাজ্য সরকারকে মোট বকেয়া ডিএ’র ২৫ শতাংশ মেটাতে চার সপ্তাহ নয়, সময় দেওয়া হচ্ছে ছয় সপ্তাহ। শুক্রবার শীর্ষ আদালতের মৌখিক নির্দেশকে ঘিরে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হলেও শনিবার আদালতের অন্তর্বর্তী আদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হওয়ার পর সেই সংশয় দূর হয়েছে।

শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, “ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার না দান— এই বিতর্ক এখনও বিচারাধীন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কর্মীদের বকেয়া আটকে রাখা অনুচিত।” সুপ্রিম কোর্ট এদিন জানিয়ে দেয়, ট্রাইব্যুনাল এবং হাই কোর্ট— দুই ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের পক্ষে রায় গিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতেই আদালতের মন্তব্য, “আমাদের মতে, কর্মীদের এতদিন অপেক্ষা করানোর কোনও মানে হয় না।”

এছাড়াও আদালত সব পক্ষকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে লিখিত বক্তব্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য হয়েছে আগামী ৪ অগস্ট

আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই রায়

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলন বহুদিন ধরেই চলছে। ডিএ মামলাটি বহুবার আদালতের তালিকায় উঠে এলেও, নানা কারণে ১৮ বার শুনানি পিছিয়েছে। তাই শুক্রবারের এই অন্তর্বর্তী আদেশ নিঃসন্দেহে আন্দোলনকারী কর্মীদের পক্ষে এক ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে ধরা হচ্ছে।

শুক্রবার বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে সাফ জানিয়ে দেয়, বকেয়া ডিএ-র অন্তত ২৫ শতাংশ মেটাতে হবে। রাজ্যের তরফে যুক্তি দেখানো হয়, “ডিএ সাংবিধানিক অধিকার নয়।” পালটা যুক্তিতে সুপ্রিম কোর্ট বলে, “হ্যাঁ, ডিএ সাংবিধানিক অধিকার নয় ঠিকই। কিন্তু কর্মীদের দিনের পর দিন বকেয়া না দেওয়াও কি যুক্তিযুক্ত?”

আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে রাজ্য

এই রায় মানতে গেলে যে রাজ্য সরকারের উপর বড় আর্থিক চাপ পড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মীরা পান ১৮ শতাংশ হারে ডিএ। অথচ কেন্দ্রীয় কর্মীদের ডিএ এখন ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ ফারাক ৩৫ শতাংশের

বকেয়া ডিএ মেটাতে গেলে রাজ্যের কোষাগারে বিরাট চাপ আসবে— এমনটাই আশঙ্কা অর্থনীতিবিদ ও সরকারি সূত্রের। তবে আদালতের রায় মানা বাধ্যতামূলক, ফলে কর্মীদের মুখে কিছুটা হাসি ফিরলেও, রাজ্যের আর্থিক বিভাগে এখন হিসেবনিকেশের ব্যস্ততা তুঙ্গে।

কী বলছেন কর্মী সংগঠনের নেতারা?

ডিএ আন্দোলনে যুক্ত এক কর্মী সংগঠনের নেতা বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি যে ডিএ কোনও দয়া নয়, এটা আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য। আদালতের নির্দেশে এখন সেটা আরও একবার প্রমাণিত হল। আশা করছি রাজ্য সরকার সময়মতো এই অন্তত ২৫ শতাংশ বকেয়া মেটাবে।”

পরবর্তী পদক্ষেপ কী?

এখন অপেক্ষা ৪ অগস্টের শুনানির দিকে। তখনই জানা যাবে সুপ্রিম কোর্ট ডিএ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় কোন পথে নেয়। তবে অন্তর্বর্তী আদেশ অনুযায়ী, আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে কর্মীদের বকেয়া ডিএ’র এক চতুর্থাংশ মেটাতে হবে— এটাই আপাতত স্পষ্ট।

খালের খবর জানতে ক্লিক করুন

Leave a Comment