মহিলা সংরক্ষণ আইন ২০২৩ : ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সংসদে ঐতিহাসিকভাবে পাশ হয়েছিল মহিলা সংরক্ষণ বিল—নতুন নামে ‘মহিলা সুরক্ষা অধিনিয়ম’। সংসদের দুই কক্ষেই বিলটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়, এবং বিরোধী ও শাসক দুই পক্ষের সম্মতিতে তা কার্যত সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। এই আইনে বলা হয়, দেশের লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভাগুলিতে ৩৩ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। অর্থাৎ, প্রতি তিনজন জনপ্রতিনিধির মধ্যে একজন হবেন মহিলা। দীর্ঘদিন ধরে দাবি থাকা এই আইনের পাশ হওয়াকে অনেকেই বলেছিলেন “নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিগন্ত”।
https://priokhobor.com/প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এটিকে নিজের স্বপ্নের প্রকল্প বলেও অভিহিত করেছিলেন। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিএসপির মায়াবতী, সমাজবাদী পার্টির ডিম্পল যাদব থেকে আরজেডির রাবড়ি দেবী—সবাই শর্তসাপেক্ষে সমর্থন করেছিলেন এই উদ্যোগকে। এমনকি সংসদে বিরোধীরা এর আগে থেকেই বিলটির প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়ে রেখেছিলেন।
কিন্তু এক বছর কাটতে না কাটতেই সেই স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছে বাস্তব। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে সংরক্ষণের কোনও প্রয়োগই হয়নি। সরকার জানিয়েছে, এই আইন কার্যকর হবে ২০২৯ সালের আগে নয়। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে দেওয়া হয়েছে যে, আগে জনগণনা ও আসন পুনর্বিন্যাস সম্পন্ন হওয়া জরুরি। কিন্তু ২০২১ সালে হওয়ার কথা থাকলেও জনগণনা এখনও হয়নি। মোদি সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়া শুরু হবে ২০২৬ সালের মে মাসে। তারপরই আসন পুনর্বিন্যাস হবে, এবং তার পরেই সংরক্ষণ আইন কার্যকর হবে।
অর্থাৎ, বিল পাশ হওয়ার ছয় বছর পরে, তাও যদি সবকিছু ঠিকঠাক চলে, তবে হয়তো ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেই প্রথমবার এই আইন প্রয়োগ হতে পারে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, এই বিল আসলে ছিল নির্বাচনের আগে মহিলাদের মন পেতে একটি রাজনৈতিক চমক। যদি সত্যিই কার্যকরের ইচ্ছা থাকত, তাহলে সরকার জরুরি ভিত্তিতে জনগণনা শুরু করতে পারত, পুনর্বিন্যাসের জন্য প্রক্রিয়া এগোতে পারত।
রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন, এই বিলের বাস্তবায়নে সরকারের যে গড়িমসি, তা আসলে দেখিয়ে দিচ্ছে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি কতটা আন্তরিক ছিল। ভোটের আগে তড়িঘড়ি করে বিল পাশ করানো, সংসদে হাততালির ঝড়, সংবাদমাধ্যমে জাঁকজমকপূর্ণ প্রচার—সবই কি তবে নির্বাচনী কৌশল ছিল?
একদিকে সংসদে ‘মহিলা শক্তি’-র বন্দনা, অন্যদিকে ছ’বছর পেরিয়েও বাস্তবে একটি পদক্ষেপ না নেওয়া—এই দ্বিচারিতা সাধারণ মানুষকে হতাশ করছে। যারা ভেবেছিলেন, ২০২৪ থেকেই দেশে এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হবে, বাস্তবে তাঁদের হাতে ফিরেছে শুধু প্রতিশ্রুতির ধোঁয়া।
সরকার এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলছে না। শুধু বলছে, “২০২৯ সালের আগে নয়”। ততদিনে সময় বয়ে যাবে, রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাবে, কত মহিলা রাজনীতিক এই অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকবেন—তার কোনও হিসেব নেই। তবুও প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে—মহিলা সংরক্ষণ আইন কি আদৌ বাস্তবে নামবে, নাকি ইতিহাসের পাতায় সেটাও হয়ে থাকবে শুধুই আর এক ভোটপূর্ব প্রতিশ্রুতি?