মহেশতলা অশান্তি : মঙ্গলবার দুপুরে মহেশতলার রবীন্দ্রনগরে হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়ে প্রবল উত্তেজনা। দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া একটি স্থানীয় বিবাদ মুহূর্তেই রূপ নেয় হিংসাত্মক সংঘর্ষে। ছাদ থেকে ইট ছোড়া, রাস্তায় আগুন জ্বলা আর পুলিশের উপর টানা আক্রমণ — গোটা এলাকা পরিণত হয় এক ভয়ানক রণক্ষেত্রে।
পুলিশ যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আসে, তখনই উত্তেজিত জনতা ইটবৃষ্টি শুরু করে। একের পর এক পুলিশকর্মী রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সাদা উর্দি ভিজে যায় রক্তে। অন্তত ৩৫ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। একাধিক পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি বাইক। স্থানীয়দের দাবি, সেটি ছিল পুলিশের বাইক।
প্রথমে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। এরপর জনতা থানার কাছেই জমায়েত হয়ে নতুন করে হামলা শুরু করে। সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তবে উত্তেজনা এতটাই চরমে পৌঁছয় যে পরে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী নামিয়ে, গলিতে গলিতে হানা দিয়ে দুষ্কৃতীদের আটক করতে শুরু করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনেকেই ছাদ থেকে ইট ছুড়ছিল।
এই ঘটনার পরে রাজ্য রাজনীতিতে শুরু হয় তুমুল চাপানউতোর। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “৩৫ জন পুলিশ মার খেয়েছে, ১২টি গাড়ি ভাঙা হয়েছে। পুলিশ ফেল, মমতা ফেল। এটা জেহাদিদের সরকার।” তিনি রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গে দেখা করতে ভবানী ভবনে গেলেও, দেখা করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেন, “একটা আপত্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।”
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে — এত বড় অশান্তি কীভাবে পরিকল্পনা ছাড়া সম্ভব? কেন আগাম সতর্কতা নেওয়া হয়নি? কেন পুলিশ পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই এমন একটি উত্তেজনাপূর্ণ এলাকায় গিয়েছিল? সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক আর অবিশ্বাস। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। প্রশাসন এখনও পর্যন্ত পুরো ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
রাতভর চলে পুলিশের ধরপাকড়। তবে এই ঘটনায় কে বা কারা সত্যিকারের দায়ী, তা এখনও অস্পষ্ট। রাজনৈতিক রং না লাগিয়ে, পুলিশের উপর এই আক্রমণকে প্রশাসন কতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখে, সেটাই এখন দেখার। সাধারণ মানুষ শুধু চাইছেন — শান্তি ফিরে আসুক, আর কোনও বাড়ি, কোনও প্রাণ যেন না জড়ায় এই অশান্তির আগুনে।