ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ খামেনেই নেতানিয়াহু : মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন এক মন্তব্য করলেন, যা নতুন করে আগুন ঢালতে পারে এই জ্বলন্ত সংঘর্ষে। তাঁর স্পষ্ট কথা, “ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই মারা গেলে যুদ্ধ থেমে যাবে।” এই বক্তব্য সামনে আসতেই আন্তর্জাতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
এর আগে মার্কিন গোয়েন্দা মহলের দাবি ছিল, খামেনেইকে হত্যার সুযোগ পেয়েছিল ইজরায়েল। সেই পরিকল্পনার কথা আমেরিকাকে জানানোও হয়েছিল। যদিও শেষ মুহূর্তে তাতে আপত্তি জানান প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর যুক্তি ছিল, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিলে যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। কিন্তু এবারে নেতানিয়াহু ঠিক উল্টো কথাই বলছেন। তাঁর মতে, “খামেনেই থাকলে যুদ্ধ চলবে, তিনি না থাকলেই থামবে এই সংঘর্ষ।”
সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু আরও বলেন, “ইরান গত ৫০ বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। সৌদির তেল স্থাপনায় হামলা করেছে, সর্বত্র সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। এই অঞ্চলকে ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখেছে তারা।” তিনি ইঙ্গিত দেন, ইরান এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে তাদের কার্যকলাপ থামাতে হলে কড়া পদক্ষেপই একমাত্র পথ।
রয়টার্সকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই মার্কিন আধিকারিক জানিয়েছেন— ইজরায়েলের কাছে খামেনেইকে হত্যার সুযোগ ছিল। তবে আমেরিকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, “যতক্ষণ না ইরান কোনও আমেরিকানকে হত্যা করছে, ততক্ষণ তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে হামলা মেনে নেওয়া যাবে না।”
এই প্রেক্ষিতে ফক্স নিউজে নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “অনেক সময় নানা ভুয়ো খবর ছড়ায়। এ নিয়ে কখনও আলোচনা হয়নি। আমি এই ধরনের জল্পনায় যেতে চাই না।” তবে খামেনেইকে লক্ষ্য করে কোনও অপারেশন চলছে কি না— এই প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, “ইজরায়েল যা করা উচিত, সেটাই করছে। এই বিষয়ে এখন কিছু বলব না।”
এদিকে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন গত শুক্রবার ইজরায়েল আকাশপথে হামলা চালায় ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রে। এই হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানী ও বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক অফিসার। ইজরায়েলের তরফে দাবি করা হয়েছে, ইরান পরমাণু বোমা তৈরির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, তাই ‘আত্মরক্ষার্থেই’ এই হামলা।
এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা আরও ঘনীভূত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে যেখানে একটি ভুল পদক্ষেপ গোটা অঞ্চলকেই ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। নেতানিয়াহুর কথায় স্পষ্ট— ইজরায়েল এখন আর ধৈর্য ধরতে প্রস্তুত নয়। কিন্তু এই পথে হাঁটলে কি সত্যিই শান্তি আসবে, নাকি বিপর্যয়ের দ্বার খুলে যাবে— উত্তর জানে সময়ই।