বিসিসিআই নতুন নিয়ম ২০২৫ : উঠতি প্রতিভাদের ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে একটি অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে বয়স লুকিয়ে প্রতিযোগিতায় খেলার প্রবণতা। এবার সেই প্রবণতাতেই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (BCCI)। বয়স ভাঁড়ানো রুখতে আরও আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পথে হাঁটছে বোর্ড। জুনিয়র স্তরে এবার থেকে আরও উন্নত ‘বোন টেস্ট’ বা হাড় পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে চলেছে বিসিসিআই।
বর্তমানে ক্রিকেটারদের বয়স নির্ধারণে TW3 (Tanner-Whitehouse 3) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি রয়েছে ‘+১ ফ্যাক্টর’ যার ফলে ক্রিকেটাররা এক মরশুমে নির্দিষ্ট বয়স পেরিয়ে গেলেও বয়সভিত্তিক বিভাগে সুযোগ পেয়ে যান। কিন্তু এবার এই পুরনো নিয়ম বদলে যেতে পারে।
বোর্ডের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর অনুযায়ী, নতুন নিয়মে অনূর্ধ্ব-১৬ ছেলেদের বিভাগে আরও একটি উন্নতমানের হাড় পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হবে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ আরও নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হবে বলে দাবি বোর্ডের। এর ফলে পুরনো ‘+১ ফ্যাক্টর’ ধাপে ধাপে গুরুত্ব হারাবে।
এক বোর্ড কর্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, “এই পদ্ধতিতে আর কোনো অঙ্ক কষে সুবিধা পাওয়া যাবে না। একজন প্লেয়ারের প্রকৃত বয়সই নির্ভরযোগ্য হবে। এতে কোনও প্লেয়ারের বছর নষ্ট হবে না, বরং এটা অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।”
তাহলে বদলটা ঠিক কী?
বর্তমানে, অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগে ছেলেদের হাড়ের বয়স সর্বোচ্চ ধরা হয় ১৬.৫ বছর এবং অনূর্ধ্ব-১৫ বিভাগে মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৫ বছর। এর অর্থ দাঁড়ায়, যদি একজন ক্রিকেটারের বয়স ২০২৫-২৬ মরশুমে হাড়ের পরীক্ষায় ১৫.৪ আসে, তবে তিনি পরবর্তী মরশুমে খেলতে পারবেন। কারণ পরের বছর তার বয়স হবে ১৬.৪ যেটি নির্ধারিত সীমার মধ্যে পড়ে।
কিন্তু যদি কারও হাড়ের বয়স এই মরশুমে ১৫.৫ হয়, তবে পরবর্তী বছর তার বয়স দাঁড়াবে ১৬.৫—যার ফলে সে ওই বিভাগে আর খেলতে পারবে না। অর্থাৎ, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এখনই হাড়ের বয়স পরীক্ষার সময়সীমা নিয়ে কড়া হচ্ছে বিসিসিআই। মেয়েদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
বয়স লুকিয়ে খেলা বন্ধেই বোর্ডের এই কড়া পদক্ষেপ
জুনিয়র স্তরের প্রতিযোগিতায় অনেক সময় দেখা যায়, বয়স লুকিয়ে তুলনায় বড় ছেলেরা খেলায় নামছে। এতে প্রকৃত প্রতিভারা বঞ্চিত হচ্ছে সুযোগ থেকে। আর সেখানেই রাশ টানতে বোর্ডের এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। বিজ্ঞানসম্মত বোন টেস্টের মাধ্যমে বয়স নির্ধারণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার স্বচ্ছতা যেমন বাড়বে, তেমনই যোগ্য প্রতিভার সুযোগ পাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে।
বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক ক্রিকেটারকেই হয়তো পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে। কিন্তু একে স্বাগত জানিয়েই বলা যায় ভারতের ক্রিকেট ভবিষ্যতের জন্য এই পদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ প্রতিভা যেমন স্বীকৃতি দাবি করে, তেমনই প্রাপ্য বয়সেও সুযোগ পাওয়াটা নিশ্চিত করা জরুরি। বয়সের নামে বাড়তি সুবিধা নিয়ে আর যেন কেউ প্রকৃত প্রতিভার কেরিয়ার ধ্বংস করতে না পারে সেই চেষ্টাই এবার বিসিসিআই-এর।