বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ ফাইনাল : লন্ডনের লর্ডসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল যেন এক থ্রিলার সিনেমার প্রথম দিনের স্ক্রিপ্ট হয়ে উঠল। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস তাড়াতাড়ি গুটিয়ে নেওয়ার পর যে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে সুবিধে করবে বলে আশা ছিল, সেটা একেবারে উল্টো চেহারা নিল মিচেল স্টার্কের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ে।
সন্ধ্যার আলো আর লাল বল—এই দুইয়ের সংমিশ্রণে স্টার্ক যেন আগুনের গোলা ছুড়লেন লর্ডসের উইকেট থেকে। মাত্র সাত ওভারে দশ রান খরচ করে দুটি উইকেট তুলে নেন তিনি। এর মধ্যে তিনটি ছিল মেডেন ওভার। বলের গতি, সুইং এবং নিখুঁত লাইন-লেংথে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময় স্কোরবোর্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৪৩, উইকেট ৪টি, ওভার ২২। তারা তখনো পিছিয়ে ১৬৯ রানে।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা শুরুটা ভালোই করেছিল। টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত একেবারে সফল হয় তাদের পেসারদের দাপটে। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার উসমান খোয়াজা একেবারে শূন্য রানে ফিরে যান ২০ বল খেলে। এরপর ক্যামেরন গ্রিনও ফিরে যান তাড়াতাড়ি, স্লিপে মার্করামের দুর্দান্ত ক্যাচে।
স্টিভ স্মিথ ও মার্নাস ল্যাবুশান ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন, কিন্তু প্রোটিয়ারা ল্যাবুশানকে ১৭ রানে ফিরিয়ে দিয়ে আবার ম্যাচে দখল নেয়। ট্র্যাভিস হেডের সঙ্গে স্মিথের জুটিও বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। প্রোটিয়ারা জানত, গতবারের ভুল তারা এবার করবে না। স্মিথ যখন ৬৬ রানে ব্যাট করছিলেন, তখন তাঁকে আউট করতে মার্করামকে বোলিংয়ে আনেন বাভুমা। মাঝারি মানের এক ডেলিভারিতেই উইকেট দিয়ে দেন স্মিথ।
এর মাঝেই একটি বড় সুযোগ হাতছাড়া করে দক্ষিণ আফ্রিকা। বিউ ওয়েবস্টারকে এলবিডব্লু করে দেওয়া সত্ত্বেও রিভিউ নেয়নি তারা। সেই ভুলের খেসারত দিতে হয় রানের দিক থেকে। স্মিথ ও ওয়েবস্টার স্কোর এগিয়ে নিতে থাকেন। ওয়েবস্টার ছিলেন একমাত্র স্থিরতা, ৭২ রান করেন। কিন্তু স্মিথের আউট হওয়ার পরই যেন ইনিংস ভেঙে পড়ে। অ্যালেক্স ক্যারি রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন। এরপর শেষ পাঁচ উইকেট পড়ল মাত্র ২০ রানে। অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয়ে যায় ২১২ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কাগিসো রাবাদা পান পাঁচটি উইকেট, মার্কো জানসেন তিনটি। বাকি দুটি উইকেট আসে নরকিয়া ও মার্করামের ঝুলিতে।
অস্ট্রেলিয়ার ছোট স্কোরকেই ম্যাচে বড় করে তোলে তাদের বোলিং ইউনিট। প্রথম দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে এখন পাহাড় সমান চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় দিনে তাদের লড়াইটা শুধু রান করার নয়, সম্মান বাঁচানোরও।