ভেঙে পড়ার আগেই পাইলটের শেষ চিৎকার— ‘Mayday’! কী এই ‘মে-ডে’ কল?

Sourav Mondal
3 Min Read
Mayday কল কী

Mayday কল কী : এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান বৃহস্পতিবার সকালে আমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড়ে উঠেছিল লন্ডনের উদ্দেশে। বিমানটিতে মোট ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন। উড়ানের কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে যায় ভয়াবহ বিপর্যয়। বিমানটি আচমকা ৬২৫ ফুট উচ্চতায় উঠে পড়ার পরই দ্রুত নেমে আসতে শুরু করে এবং তারপরই ভেঙে পড়ে।

সূত্রের খবর অনুযায়ী, পাইলট বিপদের আঁচ পেয়ে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (ATC) কাছে একটি ‘মে-ডে’ কল পাঠান। এটিই ছিল বিমানের শেষ সংযোগ। এরপরই বিমানটি সম্পূর্ণভাবে রেডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। মাটিতে আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে ওঠে মেঘানিনগরের আশপাশের এলাকা। আগুন ধরে যায় বিমান ও সংলগ্ন কয়েকটি বাড়িতে।

বিমানটির পাইলট ছিলেন অভিজ্ঞ, এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। কিন্তু সব অভিজ্ঞতা অসহায় হয়ে পড়ে যখন প্রযুক্তিগত বা যান্ত্রিক ত্রুটি আচমকা হানা দেয়। অনেক সময় কিছু বোঝার আগেই বিপর্যয় ঘটে যায়।

এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠে এসেছে ‘মে-ডে’ কল নিয়ে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এই সংকেত মূলত গুরুতর বিপদের সময় বিমানের পাইলট বা জাহাজের ক্যাপ্টেন রেডিও মারফৎ এটিসিকে জানানোর জন্য ব্যবহার করেন। এটি ফরাসি শব্দবন্ধ ‘m’aider’ থেকে এসেছে, যার অর্থ “আমাকে সাহায্য করুন”। সাধারণত তিনবার উচ্চারণ করা হয়— “Mayday, Mayday, Mayday”— যাতে এটিসি নিশ্চিতভাবে বিপদের গুরুত্ব বুঝতে পারে।

এই সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সমস্ত জরুরি ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। বিমান যদি যোগাযোগ বজায় রাখতে পারে, তাহলে তাকে নিরাপদে নামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সময়ই আর ছিল না। যে গতিতে সবকিছু ঘটেছে, তাতে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়নি।

এই দুর্ঘটনায় যাঁরা ছিলেন তাঁদের অনেকেই বিদেশে কাজ কিংবা পড়াশোনা করতে যাচ্ছিলেন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীদের নিয়ে ভরতি ছিল বিমানটি। এখনো পর্যন্ত বেঁচে থাকার কোনও নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি, তবে উদ্ধারকার্য চলছে জোরকদমে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে দমকল, পুলিশ ও এনডিআরএফের দল।

ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন। গোটা দেশ এই মুহূর্তে স্তব্ধ, বিমর্ষ। অনেকে প্রিয়জনের খোঁজে উদ্গ্রীব। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যাত্রী তালিকার জন্য অপেক্ষার প্রহর।

এই ঘটনা শুধু একমাত্র বিমান দুর্ঘটনা নয়, এটি আবারও মনে করিয়ে দেয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা যতই কঠোর হোক না কেন, কখনও কখনও নিয়তি বড় নির্মম হয়ে ওঠে। এখন গোটা দেশ প্রার্থনায়— যদি কেউ বেঁচে থাকে, সে যেন দ্রুত উদ্ধার পায়। আর এই দুর্ঘটনার কারণ যথাযথভাবে অনুসন্ধান করে ভবিষ্যতে এমন ট্র্যাজেডি যেন আর না ঘটে, সেটাই চাইছে সকলে।

Share this Article
Leave a comment