চিন-পাকিস্তান-বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা ভারতের নিরাপত্তায় আশঙ্কা: সতর্ক করলেন জেনারেল অনিল চৌহান

Sourav Mondal
3 Min Read
চিন পাকিস্তান বাংলাদেশ ভারতের নিরাপত্তা

চিন পাকিস্তান বাংলাদেশ ভারতের নিরাপত্তা : চিন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং কৌশলগত সমঝোতা ভারতের জন্য এক গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠছে। মঙ্গলবার এক থিঙ্ক-ট্যাঙ্কের আলোচনায় এই আশঙ্কার কথাই তুলে ধরলেন দেশের চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (CDS) জেনারেল অনিল চৌহান। তাঁর মতে, এই তিন দেশের অভ্যন্তরীণ স্বার্থের মেলবন্ধন ভবিষ্যতে ভারতের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

সম্প্রতি চিনের বেজিংয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন চিনা আধিকারিকরা। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেনারেল চৌহান। তিনি বলেন, পাকিস্তান বিগত পাঁচ বছরে তার অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ৭০-৮০ শতাংশ সংগ্রহ করেছে চিন থেকে। শুধু তাই নয়, চিনা সামরিক সংস্থাগুলোর পাকিস্তানে বাণিজ্যিক দায়বদ্ধতাও বেড়েছে। এই গভীর সামরিক নির্ভরতা দু’দেশের মধ্যে এক ধরনের স্থায়ী কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

এদিন জেনারেল চৌহান উল্লেখ করেন, ৭ থেকে ১০ মে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের একটি সামরিক সংঘর্ষ ঘটে, যার সময় চিনের সরাসরি কোনো অংশগ্রহণ না থাকলেও, তাদের সমর্থন পাকিস্তানের পাশে ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাঁর মতে, চিনের এই ‘ছায়াযুদ্ধ’ বা পর্দার আড়াল থেকে সহায়তা ভারতের জন্য বড়সড় কৌশলগত উদ্বেগ।

ভারতীয় সেনার উপ-প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাহুল আর সিং এ বিষয়ে আরও খোলাখুলি বলেন, পাকিস্তানকে সামনে রেখে চিন কার্যত যুদ্ধের কৌশল চালাচ্ছে। তাঁর বক্তব্য, ওই সংঘর্ষের সময় ভারত তিনটি শত্রুপক্ষের মোকাবিলা করেছিল—পাকিস্তান, চিন এবং তুরস্ক। পাকিস্তানের পাশে সরাসরি সামরিক সহায়তা দিয়েছে চিন, আর তুরস্ক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন জেনারেল চৌহান—ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলির প্রতি বহিরাগত শক্তিগুলোর প্রভাব বৃদ্ধি। তাঁর মতে, এই পরিস্থিতিও ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। অর্থনৈতিক চাপের সুযোগ নিয়ে চিন তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, আর তাতে ভারতের নিরাপত্তা ব্যহত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।

চিন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বার্থের অভিন্নতা যদি ভবিষ্যতে কোনও সামরিক বা কৌশলগত জোটে পরিণত হয়, তবে ভারতের জন্য তা যে একাধিক ফ্রন্টে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জেনারেল চৌহানের এই বার্তা শুধু সেনা বাহিনীর জন্য নয়, বরং দেশের কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কসংকেত। এখন সময় ভারতের—নিজের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও মজবুত করে প্রতিবেশী রাজনীতির প্যাঁচে ফাঁসার আগেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।

Share this Article
Leave a comment