পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলা : রিও ডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় নিন্দা জানাল ব্রিকস গোষ্ঠী। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য চিনও এই বিবৃতিতে সম্মতি জানিয়েছে, যা কূটনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অতীতে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অবস্থানকে ধোঁয়াশায় রেখেছিল চিন। তবে এবার তাদের সায় ভারতীয় কূটনীতির জোরালো অবস্থানকেই যেন তুলে ধরল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ রুখতে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্তর্জাতিক অবস্থানের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়ার প্রবণতা চলতে দেওয়া যায় না। সন্ত্রাসীদের অর্থ জোগান, সীমান্ত অতিক্রমে সহজলভ্যতা, এবং নিরাপদ আশ্রয়—এই তিনটি স্তম্ভ ভেঙে দেওয়ার বার্তা দেন তিনি।
ব্রিকস ঘোষণাপত্রে পহেলগাঁও হামলার পাশাপাশি ইরানে সাম্প্রতিক সামরিক হামলারও তীব্র নিন্দা করা হয়। এর মধ্যেই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মালয়েশিয়াও এই সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায়, মোদী ইব্রাহিমকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে কোয়াডের বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে পহেলগাঁও হামলার নিন্দা করা হলেও, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে এই হামলার কোনও উল্লেখ না থাকায় ভারত সেই যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেনি। পরে নাম না করে পাকিস্তানকে নিশানা করেছিল ভারত।
সম্মেলনের আরেকটি বড় দিক ছিল রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের দাবি। ব্রিকস গোষ্ঠী একবাক্যে মেনে নেয় যে, বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদ আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা শুল্ক নীতিরও কড়া সমালোচনা করা হয়। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি, তবুও ‘নির্বিচারে শুল্ক বৃদ্ধির’ তীব্র বিরোধিতা করে বলা হয়, এই ধরনের সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সরবরাহ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সমগ্র সম্মেলনের সুর ছিল স্পষ্ট—সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আপস নয়, আন্তর্জাতিক সংহতি এবং ন্যায়ভিত্তিক বহুপাক্ষিক নীতি ছাড়া শান্তি ও স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। ভারতের দৃঢ় কূটনীতিক অবস্থান এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বার্তা এবার আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলির সম্মতিতে নতুন উচ্চতায় পৌঁছল।