শেফালি জরিওয়ালার মৃত্যু : শেফালি জরিওয়ালা আর নেই। শুক্রবার রাতে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিরতরে চোখ বুজলেন তিনি। বয়স মাত্র ৪২। জীবনটা এত হঠাৎ থেমে যাবে, ভাবেননি কেউ। স্বামী পরাগ ত্যাগী যখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান, তখনও মনে ছিল একফোঁটা আশা—হয়তো ফিরবেন, হয়তো আবার কথা বলবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরলেন না। হাসপাতালে পৌঁছেই ডাক্তাররা জানিয়ে দেন—শেফালি আর নেই।
শনিবার তাঁর শেষকৃত্য হয় মুম্বইয়ে। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-পরিজন—সবাই ছুটে আসেন তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে, শেষ বিদায় জানাতে। কিন্তু সেই বিদায়ের মুহূর্তও যেন শান্ত হয়নি। চারপাশে ক্যামেরার ঝলকানি, রেকর্ডিং, হুড়োহুড়ি। শোকের সময়েও যেন কেউ কাউকে একটু নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ দিল না।
পরাগ ত্যাগী, যিনি এই মুহূর্তে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় শোকটা বইছেন, তাঁকে দেখা গেল কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করতে—“দয়া করে আমাকে একা থাকতে দিন, একটু সময় দিন।” কিন্তু ততক্ষণে তাঁর সেই চোখের জল, কষ্টের মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকি শেফালির মায়ের কান্নাও বাদ গেল না। মেয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়া এক মায়ের অসহায় আর্তনাদও ক্যামেরার সামনে ক্যাপচার হয়ে রইল—যেন এটাও একটা কনটেন্ট।
এই ঘটনাগুলো দেখে কষ্ট পেয়েছেন অনেকেই। অভিনেতা বরুণ ধাওয়ানও চুপ থাকতে পারেননি। নিজের ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, “আবার একটি মৃত্যু অসংবেদনশীলভাবে কভার করা হচ্ছে। কেন আমরা অন্যের দুঃখকে এমনভাবে ক্যামেরাবন্দি করি? এতে কারও কিছু লাভ হয় না। মিডিয়ায় যাঁরা আছেন, তাঁদের বলছি—দয়া করে কেউ তাঁর প্রিয়জনের শেষযাত্রাকে এমনভাবে দেখাতে চায় না।”
পরাগ যখন স্ত্রীর শেষকৃত্য সেরে বলেন, “আমার পরীর জন্য প্রার্থনা করুন, দয়া করে এটাকে নাটক বানাবেন না”—তখন যেন ভিতরটা কেঁপে ওঠে। কীভাবে এক মানুষ, যিনি সব হারিয়েছেন, তাঁকেই আবার মিডিয়ার কাছে হাতজোড় করতে হয় যেন একটু সম্মান পাওয়ার আশায়!
ময়নাতদন্তের পর মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর কারণ আপাতত ‘গোপন’ রাখা হয়েছে। যতই চিকিৎসাগত তথ্য লুকিয়ে থাকুক, যেটা সামনে এসেছে সেটা হল—একজন মানুষ চলে গেলেন, হঠাৎ করে, অকালে। আর সেই চলে যাওয়ার মধ্যেও আমরা যেন একটু আবেগ, একটু মানবিকতা ভুলে যাচ্ছি।
এই সময়টা এমন, যেখানে কেউ মারা গেলে মানুষ আগে ক্যামেরা অন করে। চোখের জল আসার আগেই ভিডিও রেকর্ড হয়। কষ্টটা আর ব্যক্তিগত থাকে না। যেন শোকেরও একটা ট্রেন্ড চলে। অথচ একটা পরিবার তখন ভেঙে পড়েছে, একজন স্বামী স্ত্রীর হাতটা চিরতরে হারিয়েছেন, এক মা তাঁর মেয়েকে হারিয়েছেন। এই অনুভবগুলো কি আর দেখার কেউ নেই?
শেফালি জরিওয়ালা ছিলেন এক সাহসী, প্রাণোচ্ছ্বল মানুষ। তাঁর চলে যাওয়া আমাদের কাঁদায়। কিন্তু আরও কষ্ট দেয় যখন দেখি, এই বিদায়ের পথেও কেউ তাঁকে একটুও শান্তিতে যেতে দিল না।
আজ শুধু প্রার্থনা, শেফালির আত্মা শান্তি পাক। আর আমরা যারা আছি, তারা যেন এমন মুহূর্তে ক্যামেরা নয়, একটু মানবিক স্পর্শ নিতে শিখি। এখনই সময় থেমে ভাবার—মানুষের কষ্টটা কন্টেন্ট নয়, সেটা কেবলই কষ্ট।