কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষে মহুয়া মৈত্র: তৃণমূলের অন্দরেই ব্যক্তিগত আক্রমণের কুৎসিত রূপ

Sourav Mondal
3 Min Read
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়া মৈত্র বিতর্ক

কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়া মৈত্র বিতর্ক : কলকাতার কসবা ল কলেজে ঘটে যাওয়া গণধর্ষণের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে। এই ঘটনার পর রাজনৈতিক মঞ্চে আরও এক বিতর্কের জন্ম দেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, “যদি একজন বন্ধু বান্ধবীকে ধর্ষণ করে, পুলিশ কী করতে পারে?” শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশ মোতায়েন রাখা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সমাজের সর্বস্তর থেকে এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা শুরু হয়, আর দলীয়ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসও দ্রুত জানিয়ে দেয়, এই মন্তব্য দলের নয়, সম্পূর্ণভাবে কল্যাণের ব্যক্তিগত মত।

এই ঘটনার ঠিক পরেই কল্যাণের বক্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন আরেক তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। নাম না করেই তিনি লিখেছিলেন, “ভারতে নারীবিদ্বেষ দলীয় সীমানা দেখে না। পার্থক্য হল, যেই ভুল করুক না কেন, তৃণমূল কংগ্রেস এই জঘন্য মন্তব্যগুলির নিন্দা করে।” মহুয়ার এই অবস্থান অনেকের প্রশংসা কুড়োলেও, তা যেন একেবারে গায়ে মাখেন কল্যাণ। তিনি এবার পাল্টা আক্রমণে নামলেন মহুয়ার ব্যক্তিগত জীবন টেনে এনে।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কল্যাণ বলেন, “মহুয়া মৈত্র তাঁর হানিমুন শেষ করে ভারতে ফিরে এসেছেন। তিনি একটি পরিবার ভেঙে ৬৫ বছর বয়সি এক বৃদ্ধকে বিয়ে করেছেন। এবং এখন তিনি বলছেন আমি নারীবিরোধী?” শুধু এখানেই থামেননি, তিনি দাবি করেন মহুয়া নিজের নির্বাচনী এলাকায় কাউকে কাজ করতে দেন না, এলাকার মহিলা নেত্রীরা তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ।

এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়, রাজনীতির মঞ্চে যুক্তি আর নীতির জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে ব্যক্তিগত কাদা ছোড়াছুঁড়ি। একজন নারী সাংসদের বিরুদ্ধে এমন কুরুচিকর আক্রমণ, তা সে যতই রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকুক, শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। মহুয়া যে ব্যক্তিগত জীবন যাপন করেন, তা নিয়ে কল্যাণের এমন প্রকাশ্য কটাক্ষ একদিকে যেমন লিঙ্গবিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ করে, অন্যদিকে দলীয় সংহতির প্রশ্ন তোলে।

তৃণমূল কংগ্রেস এই মুহূর্তে কল্যাণের এই সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি, তবে দল যেভাবে আগের মন্তব্যে নিজেদের দূরত্ব তৈরি করেছিল, তা দেখে জনমনে আশা তৈরি হয়েছে—দল হয়তো এবারও শালীনতার পক্ষে দাঁড়াবে।

এই পুরো ঘটনায় যেটা দুঃখজনক, তা হল—একটা ভয়াবহ অপরাধ নিয়ে যুক্তিপূর্ণ আলোচনার বদলে রাজনীতির আঙিনা ভরে উঠছে পারস্পরিক অপমান, ব্যক্তিগত আক্রমণ আর অনৈতিক বক্তব্যে। রাজনীতি যদি সত্যিই সমাজ বদলের হাতিয়ার হয়, তাহলে এই ধরনের আচরণ তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ধাক্কা দেয়।

এই সময়ে প্রয়োজন আরও সংবেদনশীল নেতৃত্বের, যারা অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে পারে, আবার নিজেদের মধ্যে বিভাজন ও বিদ্বেষ না ছড়িয়ে সংহতি বজায় রাখতে জানে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পালনের এই কঠিন সময়ে, ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, দরকার সম্মান ও মানবিকতার জোরালো সুর।

Share this Article
Leave a comment