কসবা ল কলেজ ধর্ষণ কাণ্ডে চাঞ্চল্য, রিপোর্টে ভয়াবহ তথ্য

Sourav Mondal
3 Min Read
কসবা ল কলেজ ধর্ষণ

কসবা ল কলেজ ধর্ষণ : কসবা ল’ কলেজে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় আরও একবার নাড়িয়ে দিল গোটা শহরকে। প্রকাশ্যে এল নির্যাতিত ছাত্রীর মেডিক্যাল রিপোর্ট। রিপোর্টে উঠে এসেছে গলায় কামড়ের দাগ, যৌনাঙ্গে গভীর ক্ষত, শরীরের একাধিক জায়গায় মারধরের স্পষ্ট চিহ্ন। অর্থাৎ, মেডিক্যাল পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে—এই তরুণী শারীরিক এবং যৌন হেনস্থার শিকার।

২৫ জুন কলেজ চত্বরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর নির্যাতিতা নিজেই কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেই হয় তাঁর শারীরিক পরীক্ষা। আর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই এবার আরও জোরালো হচ্ছে অভিযোগ।

তবে শুধু নিগ্রহেই থেমে থাকছে না বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, এফআইআর-এ অভিযুক্তদের পুরো নাম লেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি নির্যাতিতাকে। মনোজিৎ মিশ্র, জেব আহমেদ ও প্রমিত মুখোপাধ্যায়ের নাম তাঁর লিখিত অভিযোগে স্পষ্ট থাকলেও, পুলিশের নথিতে সেই অংশে চালানো হয়েছে হোয়াইটনার। বদলে লেখা হয়েছে কেবল এম, জে, ও পি।

নির্যাতিতার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, এম ও পি বাইরে থেকে ইউনিয়ন রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। সেই সময় ‘জে’ তাঁকে টেনে নিয়ে যায় ওয়াশরুমে। সেখানে বিয়ের প্রস্তাব দেয় ‘জে’। বলে, বিয়ে করলে টিএমসিপি-র পদ পাওয়া যাবে। রাজি না হওয়াতেই শুরু হয় অত্যাচার।

ছাত্রী পালাতে চাইলেও বন্ধ করে দেওয়া হয় কলেজের মূল গেট। রক্ষীকে অনুরোধ করলেও সাহায্য মেলে না। এরপর এম ও পি তাঁকে গার্ডস রুমে নিয়ে যায়, সেখানেই চলে দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক নিগ্রহ। অভিযোগে তিনি লিখেছেন, এক সময় প্রতিরোধ করার শক্তিও আর ছিল না তাঁর মধ্যে।

ঘটনার পর ‘জে’ কলেজ ছেড়ে যাওয়ার সময়ও তাঁকে হুমকি দেয়—এই বিষয়ে কাউকে কিছু বলা যাবে না।

তিন অভিযুক্ত বর্তমানে গ্রেফতার। কিন্তু সমাজে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—কলেজে কীভাবে ঘটল এমন ভয়াবহ ঘটনা? কেনই বা পুলিশ অভিযোগের নামগুলো চাপা দিতে চাইছে? কলেজ কর্তৃপক্ষ কি দায় এড়াতে পারে?

নির্যাতিতা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর মানসিক অবস্থাও সংকটজনক। পরিবার চায় ন্যায়বিচার, দ্রুত বিচার। শহরবাসী প্রশ্ন তুলছে—আর কত? আর কতদিন নারীর প্রতি এমন হিংসা চলতেই থাকবে, আর প্রশাসন নীরব থাকবে?

এই ঘটনার সঠিক বিচার না হলে সমাজের প্রতি, আগামী দিনের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বিশ্বাস একবারে ভেঙে পড়বে। প্রশাসনের কাছে এখন একটাই দাবি—স্বচ্ছ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। কারণ, এই ঘটনা শুধু একজন ছাত্রীর নয়—সমগ্র সমাজের আত্মঘাতী ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।

Share this Article
Leave a comment