যশস্বী জয়সওয়াল সেঞ্চুরি : এভাবেই নিজের জাত চেনালেন যশস্বী জয়সওয়াল। ইংল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে, যেখানে বল সুইং করে, পিচে বাউন্স থাকে, সেই হেডিংলির মাটিতে দাঁড়িয়ে যেভাবে প্রথম টেস্টেই শতরান করলেন, তা সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। ১৪৪ বলে শতরান। আর তাও যখন হাতে চোট! এমন দৃঢ়তা, এমন সাহসিকতা যে যশস্বীর খেলায় বরাবরই ছিল, তা আজ আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন।
টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। উদ্দেশ্য ছিল সকালে পিচের সাহায্যে দ্রুত ভারতীয় টপ অর্ডারকে ভেঙে দেওয়া। কিন্তু যশস্বী আর কেএল রাহুল সেই পরিকল্পনায় কার্যত জল ঢেলে দেন। প্রথম সেশনে দুই ওপেনার যথেষ্ট হিসেবি খেললেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাত খুলে খেলতে শুরু করেন। বিশেষ করে যশস্বী। বাঁহাতি ব্যাটার স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন, তিনি ব্যাটিং করতে এসেছেন জয়ের লক্ষ্যে not just to survive.
কেএল রাহুল ৪২ রানে আউট হলেও যশস্বীর দাপট থামেনি। রানিং বিটুইন দ্য উইকেট, কাট-পুল-ড্রাইভ সবকিছুতেই ছিল আত্মবিশ্বাস আর সৌন্দর্যের মিশেল। ইংল্যান্ডের মাঠে, যেখানে ভারতীয় ব্যাটাররা সাধারণত স্ট্রাগল করেন, সেখানে যশস্বী একেবারে অন্য গল্প লিখে চলেছেন।
এই ইনিংসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত আসে যখন তিনি ৯০ রানে ব্যাট করছিলেন। ব্রাইডন কার্সের বল সোজা গিয়ে লাগে হাতে। চোখেমুখে যন্ত্রণা স্পষ্ট। মাঠে ফিজিও আসেন, শুশ্রূষা হয়। সেই সময় অনেকেই ভাবছিলেন, হয়তো শতরানটা অধরাই থেকে যাবে। কিন্তু না, যশস্বী যেন সেই যন্ত্রণাকেই নিজের শক্তিতে পরিণত করলেন। চোটের মধ্যেও খেললেন দুটি দারুণ চার। ৯৯ থেকে এক শর গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়ার পর লাফিয়ে উঠে উদ্যাপন একটা সিঙ্গলের এত গুরুত্ব যে সেটা শতরানের থেকেও বড় বলে মনে হচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত চা-বিরতির পর আউট হলেও, তাঁর ১০১ রানের ইনিংসটি ভারতের ইনিংসের ভিত গড়ে দেয়। ১৫৮ বলের ইনিংসে ছিল ১৬টি চারের সঙ্গে একটি বিশাল ছক্কা।
অন্যদিকে, শুভমন গিলও ব্যাট করছেন দুর্দান্ত ছন্দে। তিনি এখনও অপরাজিত। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন ঋষভ পন্থ। এই দুই ব্যাটারও বড় ইনিংসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। ভারতের স্কোরবোর্ড ক্রমশ গড়াচ্ছে বড় রানের দিকে, আর ব্যাকফুটে যাচ্ছে ইংল্যান্ড।
এই টেস্ট সিরিজের প্রথম দিনই এমন পারফরম্যান্স যে ভারতের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দেবে, তা বলাই যায়। যশস্বীর ইনিংস শুধু একটি শতরান নয়, বরং এক নতুন প্রজন্মের মনের জোর, সাহস ও স্কিলের নিখুঁত প্রতিচ্ছবি।