থারিন্দু রত্নায়েকে : দু’হাতে বল করে নজর কাড়লেন থারিন্দু রত্নায়েকে, ক্রিকেটবিশ্বে নতুন বিস্ময়

Animesh Mondal
4 Min Read
থারিন্দু রত্নায়েকে

থারিন্দু রত্নায়েকে : শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজের মাঝে নতুন এক চমকের নাম হয়ে উঠছেন থারিন্দু রত্নায়েকে। গলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এই ২৯ বছর বয়সি স্পিনার। কিন্তু শুধুমাত্র পারফরম্যান্সের জন্য নয়, ক্রিকেটবিশ্ব তাঁকে নিয়ে আগ্রহী অন্য এক বিশেষ কারণে দু’হাতে সমান দক্ষতায় স্পিন বল করতে পারেন থারিন্দু। এমন বিরল প্রতিভা ক্রিকেটে খুব বেশি দেখা যায় না, আর তাই অভিষেকেই নজর কাড়লেন শ্রীলঙ্কার এই অলরাউন্ডার।

গল টেস্টের দ্বিতীয় দিন পর্যন্ত থারিন্দু বল করেছেন ৪৯.২ ওভার, রান দিয়েছেন ১৯৬, উইকেট নিয়েছেন তিনটি। সংখ্যার বিচারে হয়তো এটাই ‘ম্যাচ জেতানো স্পেল’ নয়। কিন্তু প্রথম দিনেই বাংলাদেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিয়ে বিপক্ষকে চাপে ফেলে দেন তিনি। ওপেনার শাদমান ইসলাম ও মোমিনুল হককে ফিরিয়ে দেন থারিন্দু, এবং তার চেয়েও বড় চমক ছিল বোলিং স্টাইল ম্যাচের এক পর্যায়ে হঠাৎ বাঁ হাতে বল করতে শুরু করেন তিনি!

ডান হাতে অফস্পিনের পাশাপাশি বাঁ হাতে বল করার সময় পুরো অ্যাকশনটাই বদলে ফেলেন থারিন্দু। নিজের অভিষেক টেস্টেই প্রথমে ডান হাতে বোলিং শুরু করে এক পর্যায়ে ১৫.৫ ওভারে বাঁ হাতে বল করে তাক লাগিয়ে দেন। ব্যাটার, ধারাভাষ্যকার, দর্শক সবাই তখন বিস্মিত।

কে এই থারিন্দু রত্নায়েকে?

২০১৫ সালে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক করেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্সও চমৎকার ৭৩টি ম্যাচে ৩৩৭ উইকেট। ২৬ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট, পাঁচ বার ম্যাচে ১০ উইকেট, আর সেরা বোলিং ৬৫ রানে ৯ উইকেট। ব্যাট হাতেও অবদান রাখতে পারেন বাঁ হাতে ব্যাট করেন তিনি।

দু’হাতে বল করার ভাবনা কীভাবে এল?

এই প্রশ্নে থারিন্দুর উত্তর আরও চমকপ্রদ। বলেন, “শুরুতে বাঁ হাতেই বল করতাম। পরে ভাবতে লাগলাম ব্যাটারদের কীভাবে সমস্যায় ফেলা যায়। তখনই মনে হল, যদি দু’হাতে বল করি তাহলে ব্যাটার কনফিউসড হয়ে যেতে পারে। এখন বেশিরভাগ সময় ডান হাতে বল করি, তবে ৪০ শতাংশের মতো সময় বাঁ হাতেও বল করি। কোন হাতে বেশি উইকেট পেয়েছি তা আমি হিসেব রাখিনি, তবে দু’দিকেই প্রচুর বল করেছি।”

তিনি আরও জানান, কোন হাতে বল করবেন, তা নির্ভর করে ব্যাটারের ধরণ এবং মাঠের কন্ডিশনের ওপর। যেমন, “ডানহাতি ব্যাটারের বিরুদ্ধে ডান হাতে অফস্পিন করলে বল ভিতরের দিকে আসে, ওটা খেলতে সমস্যা হয়। কিন্তু যদি বাঁ হাতে বল করি, তখন ওদের কাছে বেশি জায়গা থাকে শট খেলতে। ফলে সহজেই রান উঠতে পারে।” তাই যখন যে হাতে বল করেন, সে অনুযায়ী ফিল্ডিং সাজিয়ে নেন।

ক্রিকেটবিশ্বে খুব কম ক্রিকেটার রয়েছেন যারা দু’হাতে সমান দক্ষতায় বল করতে পারেন। তবে থারিন্দু একা নন। তাঁর আগেই শ্রীলঙ্কার কামিন্দু মেন্ডিস একইভাবে দু’হাতে স্পিন করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। গত আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলেছেন কামিন্দু। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে তাঁর সেই অভিষেক ম্যাচ এখনো অনেকের মনে গেঁথে আছে।

তবে থারিন্দুর ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও বিস্ময়কর, কারণ তিনি নিজের অভিষেক টেস্টেই এমন কিছু করলেন যা সাধারণত অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও করার সাহস পান না। তাঁর এই বোলিং বৈচিত্র্য শুধু ক্রিকেট বিশ্লেষকদেরই নয়, ব্যাটারদেরও বিভ্রান্ত করে দিচ্ছে।

ক্রিকেটে এমন ক্রিকেটাররা বিরল। আর যদি থারিন্দু নিজের এই ‘অ্যাম্বিডেক্সট্রাস’ বোলিং স্কিল ধারাবাহিকভাবে ধরে রাখতে পারেন, তাহলে শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণে নতুন করে এক অস্ত্র জুড়ে যাবে। এখন দেখার, আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই ব্যতিক্রমী প্রতিভাকে শ্রীলঙ্কা কতটা কাজে লাগাতে পারে।

Share this Article
Follow:
Animesh Mondal is a sports journalist and content creator with a deep passion for Indian cricket. Known for capturing emotional and powerful moments from the world of sports, He brings stories to life with a human touch. Through in-depth match reports and heartfelt narratives, Animesh aims to connect fans with the spirit of the game—one story at a time.
Leave a comment