ইরান থেকে ভারতীয় পড়ুয়া প্রত্যাবর্তন : বিপদের মাঝেও স্বস্তির নিশ্বাস—ইরান থেকে নিরাপদে দেশে ফিরছেন ১১০ জন ভারতীয় পড়ুয়া, যাদের মধ্যে রয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্রায় ৯০ জন ছাত্রছাত্রী। নানা উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা আর কষ্টের পরে অবশেষে বুধবার রাত ১০.১৫ নাগাদ তাঁদের বহনকারী বিমানটি দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে বলে জানানো হয়েছে।
বিগত কিছুদিন ধরে ইরানে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তার অভাব এবং যুদ্ধের সম্ভাবনার জেরে দেশের বহু পড়ুয়া ও তাঁদের পরিবার দুশ্চিন্তায় ছিলেন। বিশেষত ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উর্মিয়া শহরে অবস্থিত উর্মিয়া মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা ছাত্রছাত্রীরা আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। বেশিরভাগই মেডিকেল এবং অন্যান্য পেশাদার কোর্সে পাঠরত।
অভিযান শুরু হয়েছিল আর্মেনিয়ায় আশ্রয়ের মধ্য দিয়ে। কাশ্মীর থেকে আসা ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে প্রথমে ইরান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আর্মেনিয়ায়। সেখান থেকে তাঁদের দোহা পাঠানো হয়। এরপর দোহা থেকে তাঁরা বিমানে চেপে রওনা দেন দিল্লির উদ্দেশ্যে। সবমিলিয়ে একটানা আন্তর্জাতিক সমন্বয়ের এক সফল উদাহরণ রচনা করেছে এই উদ্ধার প্রক্রিয়া।
জম্মু ও কাশ্মীর স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির খুহামি জানান, ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রক ও ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে টানা যোগাযোগ রাখছিলাম। পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছিল, কিন্তু সৌভাগ্যবশত সবাই এখন নিরাপদ।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তেহরানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস পরিস্থিতি নজরে রেখে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে শহরের স্পর্শকাতর অঞ্চল থেকে তাঁদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ‘আমরা আমাদের নাগরিকদের পাশে আছি। দূতাবাস ২৪ ঘণ্টা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং প্রয়োজনে যেকোনওরকম সহায়তা দিচ্ছে,’ জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।
এই মুহূর্তে ইরানে প্রায় চার হাজার ভারতীয় রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই পড়ুয়া। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশ মন্ত্রক সর্বোচ্চ সতর্কতায় কাজ করছে।
বাড়িতে থাকা অভিভাবকদের চোখে মুখে এখন কিছুটা স্বস্তি। তাঁদের প্রিয় সন্তানরা, যারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের পাঠ নিতে এতদূর গিয়েছিলেন, তাঁরা অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন। দীর্ঘ অপেক্ষার শেষে ফিরবে হাসিমুখ, ফিরবে নিশ্চিন্ত ঘুম।
এ এক নিঃসন্দেহে মানবতার জয়। যুদ্ধ, সংকট কিংবা অস্থিরতার সময়ে এমন দ্রুত পদক্ষেপ—দেশবাসীকে আরেকবার মনে করিয়ে দিল, দেশের দূতাবাস এবং সরকার প্রবাসে থাকা প্রতিটি নাগরিকের পাশে রয়েছেন সবসময়।