চারদিনের টেস্ট ক্রিকেট : টেস্ট ক্রিকেটের নিয়মে বড়সড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। পাঁচদিনের বদলে এবার চারদিনের করা হতে পারে টেস্ট ম্যাচের দৈর্ঘ্য। আইসিসি এমনই এক যুগান্তকারী প্রস্তাব নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক বিশেষ রিপোর্টে উঠে এসেছে, লর্ডসে সদ্যসমাপ্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের সময় এই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। সেখানেই আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ প্রস্তাব দেন, অপেক্ষাকৃত ছোট ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলির কথা মাথায় রেখে টেস্ট ম্যাচের দৈর্ঘ্য একদিন কমিয়ে দেওয়া হোক।
টেস্ট ফরম্যাটের এই সম্ভাব্য বদলের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক বাস্তব কারণ। অনেক দেশই টেস্ট ক্রিকেট খেলতে আগ্রহ হারাচ্ছে খরচ ও সময়ের জন্য। পাঁচদিনের ম্যাচ মানে লম্বা সময় ধরে মাঠে নামা, সফরের খরচ, হোটেল খরচ—সব মিলিয়ে বেশ চাপ বাড়ছে। অনেক বোর্ডই তাই টেস্ট সিরিজ কাটছাঁট করে দিচ্ছে, খেলছে মাত্র দুটি ম্যাচ। আইসিসি মনে করছে, চারদিনের টেস্ট চালু হলে এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতে পারে। একই সফরে তিনটি ম্যাচের সিরিজ আয়োজন করা যাবে মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, চারদিনের টেস্টে প্রতিদিন ৯৮ ওভার করে খেলার কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থাৎ মোট ওভার সংখ্যা প্রায় ৪০০-র কাছাকাছি। আর বাস্তবও বলছে, বেশিরভাগ টেস্ট ম্যাচ পাঁচদিন পর্যন্ত গড়ায় না। সদ্য দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে হওয়া টেস্ট ফাইনালও শেষ হয়ে গিয়েছিল সাড়ে তিনদিনের মধ্যেই। ফলে এমন ফরম্যাট বাস্তবায়নে বাধা কম বলেই মনে করছেন অনেকে।
তবে এই নিয়মে ছাড় দেওয়া হতে পারে ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে। কারণ এই তিনটি দেশ ঐতিহাসিকভাবে টেস্ট ক্রিকেটের মূল স্তম্ভ। অ্যাশেজ, বর্ডার-গাভাসকর ট্রফি, কিংবা লর্ডসের ঐতিহ্যবাহী ম্যাচগুলি—এসব সিরিজ পাঁচদিনের রোমাঞ্চ থেকেই যেন জ্যোতি খুঁজে পায়। তাই এই সিরিজগুলিতে এখনও পুরোনো নিয়মই বহাল রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি, তবে ২০২৭-২০২৯ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্র থেকেই এই পরিবর্তন চালু হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। আর তাতেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ক্রিকেট দুনিয়ায়। কেউ বলছেন, এই পরিবর্তন সময়ের দাবি, টেস্টকে আরও আধুনিক ও বাস্তবসম্মত করে তোলার দিকেই এগোচ্ছে আইসিসি। আবার অনেকেই বলছেন, টেস্ট ক্রিকেটের আসল রসই হয়তো হারিয়ে যাবে এতে।
সব মিলিয়ে, লাল বলের ক্রিকেট নতুন এক মোড় নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার টানাপড়েনে কোন পথে যাবে ক্রিকেট—তা সময়ই বলবে। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, ক্রিকেটের পুরোনো ফরম্যাটেও সময়ের ছোঁয়া পড়তে শুরু করেছে।