উত্তরাখণ্ড হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা : উত্তরাখণ্ডের রুদ্রপ্রয়াগের আকাশে ভোরবেলার নিস্তব্ধতা চিরে এল এক মর্মান্তিক সংবাদ। কেদারনাথ যাওয়ার পথে একটি যাত্রীবাহী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ভেঙে পড়ে প্রাণ হারান সাতজন। তাঁদের মধ্যে মহারাষ্ট্রের ইয়াভাতমালের একটি পরিবারের তিন সদস্য – রাজকুমার জয়সওয়াল, তাঁর স্ত্রী শ্রদ্ধা ও মাত্র দুই বছরের কন্যা কাশী – ছিলেন। পাহাড়ের কোলে দেবস্থানে যাওয়ার যে আধ্যাত্মিক আকাঙ্ক্ষা নিয়ে তাঁরা রওনা হয়েছিলেন, তা মুহূর্তেই পরিণত হল মৃত্যুমিছিলে।
সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি হল, দম্পতির বড় ছেলে ভিভান এই যাত্রায় যায়নি। সে ছিল দাদুর সঙ্গে, মহারাষ্ট্রেই। পরিবারে একমাত্র বেঁচে যাওয়া শিশু সে – এক অলৌকিক রকমের দুর্ঘটনার বাইরে থেকে যাওয়া। কিন্তু কীভাবে সে বুঝবে তার মা, বাবা আর ছোট বোন আর কখনও ফিরবে না?
এই দুর্ঘটনায় পাইলট রাজবীর সিং চৌহান, বদ্রীনাথ-কেদারনাথ মন্দির ট্রাস্টের সদস্য বিক্রম সিং রাওয়াত, উত্তরপ্রদেশের ৬৬ বছরের বিনুদ দেবী এবং ১৯ বছরের তুস্তি সিং-ও প্রাণ হারিয়েছেন।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে উঠে এসেছে খারাপ আবহাওয়া। রুদ্রপ্রয়াগ জেলার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আধিকারিক জানিয়েছেন, দৃশ্যমানতা ছিল একেবারেই শূন্য, যার ফলে হেলিকপ্টারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জঙ্গলে ভেঙে পড়ে।
হেলিকপ্টারটি গুপ্তকাশী থেকে উড়েছিল বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে এবং কেদারনাথজির হেলিপ্যাডে অবতরণ করেছিল মাত্র আট মিনিট পর। সেখান থেকে ফেরার সময়, ৫টা ১৯ মিনিট নাগাদ, ঘটে এই মর্মান্তিক বিপর্যয়।
এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB)। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি শোক প্রকাশ করে জানিয়েছেন, কেদারনাথের হেলিকপ্টার পরিষেবা আপাতত দু’দিনের জন্য বন্ধ রাখা হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহেই একের পর এক এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে। ৮ মে গঙ্গোত্রীধামে যাওয়ার পথে হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে ছ’জনের মৃত্যু হয়। ৭ জুন কেদারনাথগামী এক হেলিকপ্টার যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাস্তায় জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়।
এই ঘটনাগুলি কেবল প্রযুক্তিগত বা আবহাওয়ার ত্রুটি নয়, বরং বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে পাহাড়ি এলাকায় নিয়মিত হেলিকপ্টার পরিষেবার নিরাপত্তা নিয়ে।
মৃতদের পরিবারে শোকের ছায়া, আর এক বেঁচে যাওয়া শিশুর জীবনে এক অদৃশ্য ভার – যা বহন করতে হবে তাকে সারা জীবন। কেদারনাথের পথে এদিন শুধু যাত্রা থামেনি, থমকে গিয়েছে অনেকগুলো জীবন, অনেকগুলো ভবিষ্যৎ।