বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ জিতে ইতিহাস গড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা

Animesh Mondal
3 Min Read
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ জয় দক্ষিণ আফ্রিকা

বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ জয় দক্ষিণ আফ্রিকা : অবশেষে শেষ হল এক দীর্ঘ অপেক্ষার অধ্যায়। একুশ শতকের ক্রিকেট ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকার নামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া সেই গলার কাঁটা — ‘চোকার্স’ — শেষমেশ ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিল। এক অনন্য সূর্যোদয় দেখল রামধনুর দেশ। অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জয়টা শুধুই ক্রিকেট ম্যাচ জেতা নয়, এটি এক দীর্ঘমেয়াদি মানসিক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার গল্প। যে গল্পের পাতা পাতায় লেখা আছে কান্না, ব্যর্থতা, অসমাপ্ত স্বপ্ন।

১৯৯৮ সালে আইসিসি নকআউট ট্রফি জয়ের পর একের পর এক টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকা কখনও সেমিফাইনালে হেরেছে, কখনও ফাইনালে উঠে মুখ থুবড়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে তো এমনও হয়েছে, জয় প্রায় নিশ্চিত— সেখান থেকে বৃষ্টির জেরে নাটকীয় হারে বিদায় নিতে হয়েছে। একেকটা পরাজয়ের পর যেন আরও একটু করে জমেছে চাপা কান্না, বুক ফাটানো হাহাকার।

তবে এই দলটা যেন একটু অন্যরকম। এই দলটা শুধুমাত্র ক্রিকেট খেলেনি, হৃদয় দিয়েও লড়েছে। তৃতীয় দিনের শেষে জয় থেকে মাত্র ৬৯ রান দূরে দাঁড়িয়ে, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে হাতের মুঠোয় থাকা সুযোগ— সেটাও ভয় ধরিয়েছিল ভক্তদের মনে। ‘আবার না ফসকে যায়!’ এমন আশঙ্কায় অনেকেই হয়তো চতুর্থ দিনের খেলা দেখতে সাহস পাননি।

আর এডেন মার্করাম সেই ভয়কে জয় করে রূপকথার জন্ম দিলেন । শতরান করে চতুর্থ দিনের সকালটা যখন ভরিয়ে তুলছিলেন আত্মবিশ্বাসে , ঠিক তখনই বড় ধাক্কা— প্যাট কামিন্সের বলে আউট বাভুমা। যে জুটি দক্ষিণ আফ্রিকার ভিত গড়ে তুলেছিল, সেই ১৪৭ রানের জুটি ভাঙতেই ফের ফিরে এল সেই পুরনো আশঙ্কা । তবে এবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে দেননি মার্করাম। ব্যাটে, পায়ে, মস্তিষ্কে অদম্য এক দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দলকে।

জয়ের জন্য যখন মাত্র ছয় রান দরকার, ঠিক তখন আউট হন মার্করাম। ততক্ষণে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচটাকে জয়ের মুখে দাঁড় করিয়ে গিয়েছেন। বাকি কাজটা সারেন কাইল ভেরেইন ও ডেভিড বেডিংহ্যাম। এবং স্টার্কের বলে ভেরেইনের সেই শট কভার পয়েন্ট পেরিয়ে যেতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা লর্ডস, গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা।

অস্ট্রেলিয়া বাদে ক্রিকেটবিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোণ থেকে শুভেচ্ছা ভেসে এসেছে প্রোটিয়াদের উদ্দেশ্যে। সবাই যেন চেয়েছিল, এই একটা বার অন্তত ইতিহাস বদলাক। আর দক্ষিণ আফ্রিকা তা করেও দেখাল।

এটা শুধুমাত্র এক ফাইনাল জয়ের গল্প নয়, এটা নিজেদের অতীতকে অতিক্রম করার সাহসিকতার গল্প। চোখের জলের বদলে এবার আনন্দাশ্রু, ভাঙা স্বপ্নের বদলে মাথা উঁচু করে ট্রফি হাতে তোলা — দক্ষিণ আফ্রিকা লিখে দিল নতুন ইতিহাস। আজ আর কেউ বলবে না ‘চোকার্স’। আজ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নামের পাশে লেখা থাকবে — বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন।

Share this Article
Follow:
Animesh Mondal is a sports journalist and content creator with a deep passion for Indian cricket. Known for capturing emotional and powerful moments from the world of sports, He brings stories to life with a human touch. Through in-depth match reports and heartfelt narratives, Animesh aims to connect fans with the spirit of the game—one story at a time.
Leave a comment