আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: পাইলটের ‘মেডে’ বার্তা ঘিরে জোরালো প্রশ্ন, তদন্তে উঠছে গাফিলতির আশঙ্কা

Sourav Mondal
3 Min Read
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা : আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত ধোঁয়াশা কাটেনি। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০, এবং এখনও ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হচ্ছে দেহ। অসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ শুরুতে জানিয়েছিল, বিমানের ইঞ্জিনে পাখির ধাক্কাতেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সে দাবিকে মেনে নিতে পারছে না বিশেষজ্ঞ মহল। তাঁদের মতে, এত বড় মাপের বিপর্যয়ের জন্য পাখির ধাক্কা একটি একমাত্র কারণ হতে পারে না। বরং গাফিলতির সম্ভাবনাই এখন প্রবল হয়ে উঠছে।

এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র সরকারের উপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। জনমানসে ক্ষোভ বাড়তেই শনিবার রাতে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক উচ্চস্তরীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রধান সচিবের নেতৃত্বে তৈরি এই কমিটিতে থাকছেন আহমেদাবাদ পুলিশ কমিশনার, বায়ুসেনার ডিজি, সিভিল অ্যাভিয়েশনের ডিজি, ফরেনসিক আধিকারিক এবং আইবি-র স্পেশ্যাল ডিরেক্টর। তাঁরা শুধু দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণই অনুসন্ধান করবেন না, পাশাপাশি খতিয়ে দেখবেন বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ ও চলাচল সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (SOP) আদৌ যথাযথ ছিল কি না। সরকার জানিয়েছে, এই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং অন্য কোনও তদন্তের সঙ্গে তার সংঘাত হবে না।

ঘটনাস্থল মেঘানিনগরের চিকিৎসকদের হস্টেলের ছাদ থেকে উদ্ধার হয়েছে ব্ল্যাকবক্স। এনএসজি-র নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে সেটিকে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই ব্ল্যাকবক্সেই লুকিয়ে রয়েছে দুর্ঘটনার আগে-পরে ঘটে যাওয়া প্রযুক্তিগত বা মানবিক ত্রুটির সমস্ত তথ্য। বিমানের ফ্লাইট ডেটা এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ড—দুটোই জানাবে সেই সংকটময় মুহূর্তের আসল ছবি।

দুর্ঘটনার সবচেয়ে করুণ দিক—পাইলটের শেষ বার্তা। টেক-অফের পর পরই পাইলট এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানান, ‘ইঞ্জিনে জোর পাচ্ছি না, পাওয়ার চলে যাচ্ছে, তুলতে পারছি না।’ এই কয়েকটি শব্দেই ধরা পড়ে গিয়েছে সেই মুহূর্তের ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তি এবং হতাশা। এটি কি শুধুই প্রযুক্তিগত সমস্যা? না কি রক্ষণাবেক্ষণে কোনও গাফিলতি থেকে গিয়েছিল? পাইলট কি কোনও বিকল্প পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন?—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখন ব্ল্যাকবক্স আর তদন্তের উপর নির্ভর করছে।

ভারত সরকারের পাশাপাশি তদন্তে হাত মিলিয়েছে আমেরিকার ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) এবং ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA)। বোয়িং এবং GE Aerospace জানিয়েছে, তারা এই তদন্তে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। এদিকে, ডিজিসিএ এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের অধীন এয়ারক্রাফ্ট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) নিজস্বভাবে তদন্ত চালাচ্ছে।

এই দুর্ঘটনায় দেশের নানা প্রান্ত থেকে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—সত্যিটা সামনে আসুক, দায়ীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হয়। কারণ এই প্রাণহানির পিছনে যদি গাফিলতি থেকে থাকে, তবে তা যেন ভবিষ্যতে আর কাউকে গ্রাস না করে। স্বচ্ছ তদন্ত, নিরপেক্ষতা এবং জবাবদিহিতাই এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। কারণ দুর্ঘটনা থামানো না গেলেও, তার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যেতে পারে। এজন্য সিস্টেমকে আরও মানবিক, আরও দায়বদ্ধ হতে হবে—এই দুর্ঘটনার মূল্যবান শিক্ষা হয়তো এটাই।

Share this Article
Leave a comment