২০২৫ সালে ভারতের জনসংখ্যা শীর্ষে | রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে চমকপ্রদ তথ্য

Sourav Mondal
3 Min Read
২০২৫ সালে ভারতের জনসংখ্যা

২০২৫ সালে ভারতের জনসংখ্যা : করোনার সময়েই প্রথমবার চিনকে টপকে যাওয়ার সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়েছিল ভারত। এবার সেই সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক দফতর ইউএনএফপি-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০২৫ সালের শেষেই ভারত হয়ে উঠতে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। চিনকে পেছনে ফেলে জনসংখ্যার নিরিখে ভারতের অবস্থান হবে শীর্ষে।

তবে এই সমীক্ষা শুধু সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্য দেয়নি, তুলে ধরেছে আরও এক জটিল বাস্তবতাকে—ভারতের মতো বহু দেশের জন্মহার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ইউএনএফপি পরিচালিত সমীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৪টি দেশের মোট ১৪ হাজার মানুষ। দেখা গিয়েছে, এই অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আর্থিক অনিশ্চয়তা, সামাজিক চাপ এবং সন্তান পালনের দায়িত্বের ভয়।

যাঁরা পরিবার গড়তে চান, তাঁদের অনেকেই চাইছেন দুটি বা তার বেশি সন্তান। কিন্তু চাওয়া আর পাওয়া এক নয়। বহু মানুষ বাধ্য হচ্ছেন ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে ছোট পরিবারে সীমাবদ্ধ থাকতে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতে এই প্রবণতা আরও বেশি।

ভারত, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশে এই পরিস্থিতি সবচেয়ে প্রকট, যদিও উন্নত দেশ যেমন জার্মানি, ইতালি বা দক্ষিণ কোরিয়াও একই সমস্যায় ভুগছে। ফলে কম জন্মহার এখন কেবল উন্নয়নশীল দেশের সমস্যা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী এক অভিন্ন চ্যালেঞ্জ।

এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, হাঙ্গেরি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার মতো দেশে। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ এই দেশগুলিতে বাস করেন, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন আয়ের নানা রাষ্ট্র।

ভারতের সামনে এখন এক দ্বৈত চ্যালেঞ্জ। একদিকে, বিশাল জনসংখ্যাকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করা, অন্যদিকে ভবিষ্যতের কর্মক্ষম জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জনসংখ্যার ভারসাম্য বজায় রাখা। জন্মহার হ্রাসের ফলে ভবিষ্যতে প্রবীণ জনগণের সংখ্যা বাড়বে, যার ফলে চাপ বাড়বে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও সামাজিক সুরক্ষার উপর।

এই রিপোর্ট কেবল সংখ্যা নয়, এটি একটি বাস্তবতা—যেখানে মানুষের স্বপ্ন, ভয়, ইচ্ছা ও বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত একসঙ্গে মিশে গেছে। ভারতের মতো একটি দেশের পক্ষে এই বিশাল জনসংখ্যাকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে হলে এখন থেকেই চাই সুস্পষ্ট নীতি, কার্যকর পরিকল্পনা এবং জনসচেতনতা। কারণ জনসংখ্যা কেবল একটা পরিসংখ্যান নয়, তা দেশের ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি—যা সঠিকভাবে কাজে লাগালে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে গোটা জাতিকে।

Share this Article
Leave a comment